সাতছড়িতে আনন্দ ভ্রমণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মার্চ ২০২১, ৫:৪৫:৫৯ অপরাহ্ন
আবুযর মো.আব্দুল মান্নান:
৫ মার্চ ২০২১ দিনটি ছিল শুক্রবার। আমাদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। শীতের পাতাঝরা মৌসুম কাটিয়ে প্রকৃতিতে সবে শুরু হয়ে নব উদ্যোমে প্রাণের সঞ্চার। গাছে গাছে আসছে নয়া কলি। চারদিকে বিরাজ করছে এক নান্দনিক আবহ। এমনি এক সময়ে আমরা হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি সোসাইটি ও ছাত্র সংগঠন এদিন শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক উদ্যানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ/সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০৫ সালে এই উদ্যান প্রতিষ্ঠা করা হয়। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে এর অবস্থান। একসময় এর নাম ছিল রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট।
কদিন থেকেই আমাদের প্রস্তুতি চলছিল শিক্ষাসফর নিয়ে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ইমদাদুল হক মিলন এবং সেক্রেটারী ডা. নাজমুল হকের দিক নির্দেশনায় আমরা পরিকল্পনা করি এক উৎসবমুখর আয়োজনের। সকাল ৮টায় সংগঠনের মির্জাজাঙ্গাল মনিপুরী রাজবাড়ি কার্যালয়ের সামনে থেকে সুসজ্জিত বাসে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। গাড়িতে ছোট্ট ছোট্ট নানান আয়োজন আর সদস্যদের প্রাণবন্ত ব্যক্তিগত উপস্থাপনায় যাত্রা হয়ে ওঠে আনন্দময়। এসময় আমরা সবুজ চা বাগান আর পাহাড়ের মাঝে কালো পিটঢালা রাস্তা হয়ে পৌঁছে গেলাম সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে।
সাতছড়িতে প্রকৃতি দেখার পাশাপাশি ছিল খেলাধুলার আয়োজন। ফুটবল, ক্রিকেট আর মেয়েদের জন্য হাড়ি ভাঙা, গান ইত্যাদিতে সবাই মেতে উঠেন। উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেতসহ ২শ এর অধিক গাছপালা রয়েছে।
এছাড়া রয়েছে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু। যার মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর ও প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের অভয়াশ্রম। বনে লজ্জাবতী বানর, উলুক, চশমাপরা হনুমান, শিয়াল, কুলু বানর, মেছোবাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি; সরীসৃপের মধ্যে সাপ; পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠ ঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলদে পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। এছাড়া গাছে গাছে আশ্রয় নিয়েছে অগণিত পোকামাকড়, ঝিঁঝি পোকা ইত্যাদি।
এ শিক্ষা সফরে আমাদের জন্য অন্য সফরগুলোর চেয়ে একটু আলাদা ছিল। এখানে আমাকে হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি ছাত্র সংগঠন সিলেট জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়। আমার সাথে সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চক্রবর্তী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বিকাশ ধর বাবলুসহ নব গঠিত কমিটির নাম ঘোষণা করেন সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি উপাধ্যক্ষ ডা. ইমদাদুল হক স্যার।
ফুল দিয়ে বরণ করেন জালালাবাদ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এবং সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি ডা.আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ খান স্যার। এতে ডা. শরিফ শাহরিয়ার, প্রভাষক ডা.নাজমুল হক, ডা. শাহ জামাল উদ্দিন, প্রভাষক ডা. সাজ্জাদুর রাহমান, প্রভাষক ডা.ফরহাদ আহমদ, প্রভাষক ডা. কলি রায়, প্রভাষক ডা. জাকিয়া সুলতানা, ডা. আব্দুল জব্বার, ডা. নকুল বিশ্বাস নিলয় সহ সোসাইটির ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্য বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।