কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২১, ৯:৪০:৪৩ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
সিলেটের কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। হাসপাতাল, সরকারী-বেসরকারী অফিস, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার ও গণপরিবহনে মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। করোনাভীতি থাকলেও মাস্ক ব্যবহারের আগ্রহ নেই মানুষের। একইভাবে ভাটা পড়েছে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতিতেও। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নো মাস্ক, নো সার্ভিস লেখা থাকলেও খোদ বিক্রেতারাই মাস্ক ছাড়াই বেচাকেনা করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে শুরুতে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কঠোর থাকলেও এখন গা-ছাড়া ভাব। এসব কারণে সিলেট বিভাগে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের হার।
গত দুই সপ্তাহ আগে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ও মৃত্যু কম ছিলো। কিন্তু আবারও করোনা সংক্রমণ খারাপের দিকে যাচ্ছে। নতুন শনাক্ত রোগী, শনাক্তের হার ও মৃত্যু তিন সূচকই বাড়তির দিকে। এ অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে না। কোভিড রোগীদের চিকিৎসা, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা এবং টিকা দেওয়ার মধ্যে সরকারী কাজ সীমিত হয়ে আছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নেই প্রচার ও সচেতনামূলক কোন কার্যক্রম।
সিলেট স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসের শুরু থেকেই সিলেটে করোনা প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ রোববার ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে আরো ১৪ জনের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬৯১ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১০ হাজার ১৪৬ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৫৬৯, হবিগঞ্জে ২ হাজার ১৭ এবং মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৯৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এ দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। তবে রোববার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮১ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২১৭ জন, সুনামগঞ্জে ২৬ জন, হবিগঞ্জে ১৬ জন এবং মৌলভীবাজারের ২২ জন।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ ঘরের বাইরে গেলেও অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তাদের মাঝে একধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। অফিস-আদালত থেকে হাট-বাজার সবখানেই একই অবস্থা। সরকারের পক্ষ থেকে জনসমাগম এড়াতে নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে কোথাও তা মানা হচ্ছে না। বিয়ে ও বনভোজনসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে জনসমাগম বেশি হওয়ায় করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সরকারের পক্ষ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়া হলেও তা না মেনে লোক সমাগামের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
এদিকে, করোনার মধ্যে ঝুঁকি যেনেও নগরীর শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠে পণ্য প্রদর্শনীর নামে চলছে বাণিজ্য মেলা। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। প্রতিদিনই শত শত মানুষ ভিড় করছেন মেলার মাঠে। মেলায় আসা অধিকাংশ নারী-পুরুষ ও শিশুদের মুখে মাস্ক নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে নির্দেশনা জারি করা আছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বিশেষ করে মাস্ক পরা নিয়ে লোকজনের উদাসীনতা চরম মাত্রায় উঠেছে। যার ফলে সামনের দিনগুলোয় সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে, করোনার ঊর্ধ্বগতি কমাতে আবার আগের অবস্থায় যাচ্ছে সরকার। বিয়ে, সভা-সমাবেশসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বা কমাতে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও ইউএনওদের চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গুটিয়ে ফেলা কোভিড হাসপাতালগুলো আবার চালু হচ্ছে। জেলা হাসপাতালের কোভিড বেডে আবার রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আ.ন.ম বদরুদ্দোজা জালালাবাদকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে নির্দেশনা জারি করা আছে। আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবাদান করতে বলে দিয়েছি। করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে সকলকে সচেতন হতে হবে।