লকডাউনের আগে তীব্র যানজট, পরিবহন সংকটে মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ১১:০১:১২ অপরাহ্ন
মামুন পারভেজ:
আজ থেকে সারা দেশে শুরু হচ্ছে এক সপ্তাহের লকডাউন। লকডাউনের আগে গতকাল রোববার নগরীতে ছিল লোকজনের উপচে পড়া ভীড়। কেনাকাটা আর জমানো কাজ শেষ করতেই তড়িঘড়ি করে জনসাধারণের এই ছুটে চলা। ভীড় ছিলো রেল, বাস টার্মিনালে। বাড়তি জনসমাগম বেড়ে যাওয়ায় নগরজুড়ে দিনের বেলা দেখা দেয় তীব্র যানজটের। আর রাতে বাড়িফেরা লোকজনকে পড়তে হয় মারাত্মক পরিবহন সংকটে। অল্প যে কয়টি যানবাহন ছিল এতে লোকসমাগম বেশি থাকায় এবং করোনাকালীন যাত্রী পরিবহনের বাধ্যবাধকতার অজুহাতে গণপরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভীড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি বেশিরভাগকেই। মাস্কবিহীন চলাচল করছেন অধিকাংশ লোকজন। লকডাউনের ব্যাপারে প্রশাসন বলছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শহরজুড়ে যে হারে লোকসমাগম বেড়েছে তাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

গতকাল বিকেলে বন্দরবাজার পয়েন্টের চিত্র -জালালাবাদ
নগরীর কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। এসময় যাত্রী পরিবহনের বাধ্যবাধকতার অজুহাতে গণপরিবহনগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। পরিবহন সংকটের কারণে সিলেট আসা যাত্রীদের পায়ে হেঁটে নগরীতে আসতে দেখা যায়। যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে বসে থাকতে হয়। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তীব্র যানজট ছিল। এছাড়া, বিআরটিসির বাস ছাড়া সরকারি নির্দেশমালা উপেক্ষিত ছিল অন্যান্য গণপরিবহনগুলোতে। যাত্রীবেশি থাকায় মাস্ক ছাড়া যাত্রী পরিবহনসহ অনেকেই গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে দেখা যায়। একই দৃশ্য চোখে পড়ে নগরীর কদমতলী বাস স্ট্যান্ড এলাকায়। এছাড়া নগরীর জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, মেন্দিবাগ, নাইওরপুল, মিরাবাজার, সুবহানীঘাট এলাকায় তীব্র যানজটে আটকা পড়েন যাত্রীরা।
সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট এসেছেন স্বাস্থ্যকর্মী নাসিম। তিনি জানান, লকডাউনের কারণে ছুটি শেষ হওয়ার আগেই কাজে ফিরতে হয়েছে। কুমারগাঁও থেকে বন্দরের সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশায় তিনজন যাত্রী নেয়ার নিয়মের কারণে দ্বিগুণ ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও আজ যাত্রী বেশি হওয়া ৫০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। তারপর সিএনজি চালক ও যাত্রীদের বেশির ভাগই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এমনকি অনেকে নির্দেশনা না মেনে তিনজনের অধিক যাত্রী নিতে দেখা যায়।
এদিকে, সকাল হতে না হতে বাজার করতে ছুটে আসেন নগরী ও শহরতলীর মানুষেরা। গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছিল, সামনে রমজান মাস, তাই লকডাউনের প্রভাবে বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে এই আশঙ্কায় পুরো মাসের বাজার সদাই করতে ব্যস্ত অনেকে। খুচরা থেকে পাইকারী বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় ছিল অনেক। গতকাল সিলেট নগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারীর আড়ৎ কালীঘাটসহ বিভিন্ন বাজারে তিল ধরার মত ঠাঁই ছিল না।
বাজারে চাল-ডালসহ বাড়তি চাহিদার কারণে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে পাইকাররা বলছেন দাম বাড়েনি। সংকটও নেই। কিছু মানুষ অযথা বেশি বেশি করে চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য কিনছে। আর এ সুযোগে কেউ কেউ দাম বেশি নিতে পারে। তবে পেঁয়াজ, আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দুই-তিন সপ্তাহ ধরেই শাক-সবজির বাজার চড়া। আগে থেকেই তেল চালের দাম বাড়তি ছিল। তবে পণ্য সংকট ছিল না বাজারে। আজও নেই। কিন্তু এক সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণায় হঠাৎ করে প্রতিকেজি চাল এক থেকে দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি শুরু হয়েছে। বাজারে আসা ক্রেতাদের বেশির ভাগই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। শতকরা দশ জনের মধ্যে ৭ জনেরই মাস্ক নেই জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে, তাই অতিরিক্ত নিত্যপণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নগরীর কালীঘাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, লকডাউনের খবরে শহরতলীর খুচরা ব্যবসায়ীরা মালামাল মজুদ করতেই ভীড় করছেন বাজারে। লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। মালামাল নেয়ার সুযোগ থাকলেও লকডাউনের সময় বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। তাই কেউ কেউ একসপ্তাহের আবার কেউ কেউ তারও বেশি দিনের জন্য মালামাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
রোববার দুপুরে বন্দরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, লোকজন চালসহ অন্যান্য পণ্য রিকশায়, ভ্যানে, মোটরসাইকেলে এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন। লালবাজার ও ব্রহ্মময়ী কাঁচাবাজারসহ আশেপাশের বাজারে ক্রেতাদের বাড়তি পণ্য কিনতে দেখা গেছে।
কেন বেশি করে কিনছেন জানতে চাইলে বলছেন কয়েকজন ক্রেতা জানান, লকডাউনের সময়সীমা যদি বাড়ে তাই বেশি করে কিনেছি।
কালীঘাট চাউল বাজার মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, বাজারে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। আজ সব ধরণের পণ্যই ভালো বিক্রি হয়েছে। লকডাউনের কারণে অনেক খুচরা ব্যবসায়ীরা একসপ্তাহের মালামাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। পাইকারী বাজারে চালের দাম বাড়েনি।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বাজার কর্মকর্তা শাহ মোহম্মাদ মোরশেদ কাদের বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে, তাই অতিরিক্ত নিত্যপণ্য কিনে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার কোনো মানে হয় না। স্বাভবিক ক্রয়ের উপর সবাই কে আস্থা রাখতে হবে। এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আজ রোববার বাজারে যে হারে জনসমাগম বেড়েছে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, কোনো সন্দেহ নেই। আমরা টিসিবি’র পণ্য কিনতে হলে মাস্ক বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি।