সংক্রমণ না কমলে বাড়তে পারে লকডাউন : স্বাস্থ্য অধিদফতর
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২১, ৯:২১:১৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক : স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। সংস্থাটির মুখপাত্র ডা: মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, মূলত সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্যই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদি দেখা যায় যে, সংক্রমণ কমে আসছে তাহলে আরো কমাতে লকডাউন বাড়ানো হতে পারে। আবার যদি পরিস্থিতি উল্টো হয় যে, রোগী বাড়ে এবং হাসপাতালে জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তাহলেও লকডাউন বাড়তে পারে।
এদিকে, লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না, আগামী বৃহস্পতিবার ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রি পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ কথা জানান।
সোমবার বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মারা গেছে ৫২ জন। আর এই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭২ জন।
এর আগে রোববার আক্রান্তের এই সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৮৭ জন। অর্থাৎ গত দুদিন ধরেই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়েছে। যা গত বছর করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৩.৪০ শতাংশে।
করোনা সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতে সোমবার থেকে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। লকডাউনের আওতায় গণপরিবহন, চিকিৎসা-সৎকার ছাড়া সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাওয়া, হোটেল- রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া, শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটার মতো বিষয়গুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
তবে লকডাউন থাকলেও কোয়ারেন্টাইনের শর্ত মেনে বিদেশ যাওয়া-আসা করা, জরুরি পণ্য ও সেবাদানকারী যানবাহন, সীমিত আকারে অফিস-আদালত ও শিল্প কারখানা খোলা, হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কেনা, অনলাইন বা টেলিফোনে কেনাকাটা, পণ্য সরবরাহ, নির্দিষ্ট সময়ে উন্মুক্ত স্থানে বাজার বসা এবং সীমিত আকারে ব্যাংকিংয়ের মতো কাজ পরিচালনা করা যাবে।
এ অবস্থায় সাত দিনের লকডাউন সংক্রমণ কমিয়ে আনতে কাজ করবে কিনা সে বিষয় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: শর্মিলা হুদা বলেন, বাংলাদেশে লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, লকডাউন মানে হচ্ছে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
‘এখানে লকডাউনকে মানুষ ছুটি বা অবসর হিসেবে ধরে নিয়ে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। লকডাউন যদি হয় তাহলে বইমেলা খোলা থাকছে কিভাবে? অফিস-আদালত খোলা থাকছে কিভাবে? খোলা থাকলে তো আর লকডাউন হলো না,’ বলেন তিনি। তিনি মনে করেন, বর্তমানে যেভাবে লকডাউন চলছে এটি দিয়ে বাংলাদেশে সংক্রমণ কমিয়ে আনার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ডা: শর্মিলা হুদা বলেন, লকডাউন দেয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে সংক্রমণ কমানো। তবে এর প্রমাণ থাকতে হবে। আর এর একমাত্র উপায় হচ্ছে সবকিছুর হার কমবে। ‘সংক্রমণের হার কম হবে, মৃত্যুর হার কম হবে, এটা দিয়েই তো বোঝা যাবে যে সংক্রমণ কম হচ্ছে।’
তিনি মনে করেন, সাত দিনের লকডাউনের মাধ্যমে আসলে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনাটা সম্ভব নয়। এই সাত দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে হয়তো কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে যে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। তবে এই সাত দিনের লকডাউন দিয়ে কিছুই হবে না।
একই ধরনের মত দিয়েছেন পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারপার্সন ডা: ফাতেমা আশরাফও। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এরইমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। লকডাউনের আগে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। যার কারণে গ্রামাঞ্চলও এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এই সাত দিনের লকডাউনের মাধ্যমে কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, লকডাউনের মাধ্যমে হয়তো সামাজিক অনুষ্ঠান বা ভিড় কমানোর মতো বিষয়গুলোতে কিছুটা লাগাম টানা যেতে পারে। তবে এটি দিয়ে সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাবে না বলে জানান তিনি।
তার মতে, সংক্রমণ কমিয়ে আনতে হলে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ বাড়বে এবং হাসপাতালে স্থান সংকটও দেখা দিতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ডা: মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, সংক্রমণ কমাতে হলে শুধু লকডাউনের মতো একটা পদ্ধতি দিয়ে কাজ হবে না। সেক্ষেত্রে সবগুলো পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে।