অবিলম্বে জরুরী সহায়তা প্রয়োজন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২১, ৯:২২:৫৮ অপরাহ্ন
দৈনিক জালালাবাদসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সোমবার একটি চমৎকার ও আশা সঞ্চারী সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে ‘আইডিয়া’ ও ‘পেনী এপ্রিলের’ সহযোগিতায় রমজানের খাবার পেলো ১২০ পরিবার। এতে বলা হয়েছে, হাওর অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের জন্য ৩০ দিনের খাবারের চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে ইন্সটিটিউট অব ডেভেলাপমেন্ট অ্যাফেয়ার্স (আইডিয়া) এর উদ্যোগে পেনী এপ্রিলের সহযোগিতায় শুকনো খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার দাস নোয়াগাঁও গ্রামে গত রোববার আসন্ন রমজান মাসে এলাকার শিশু ও বয়স্কসহ সকল মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার জন্য ১২০টি পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়।
খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৫০ কেজি চাল ও ৫ লিটার তেলসহ ডাল, আটা, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, চিনি ইত্যাদি বেশ কিছু নিত্যপণ্য। অত্যন্ত চমৎকার ও সময়োপযোগী এই উদ্যোগ। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের হাওরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকাসহ দেশের প্রায় সকল স্থানে লাখ লাখ নয়, কোটি কোটি মানুষ আর্থিক দিক দিয়ে এখন অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে আছেন। এ অবস্থায় ‘আইডিয়া’ নামক সংগঠনটি দরিদ্র মানুষের মাঝে এক মাসের জন্য পরিবারভিত্তিক যে নিত্যপণ্য সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে তা অনুপ্রেরণাদায়ী ও অনুসরণযোগ্য। এতে উপকারভোগী পরিবারগুলো যে বেশ কিছুদিনের জন্য অন্নসহ নিত্যপণ্য যোগাড়ের দুশ্চিন্তা ও দুর্ভোগ থেকে যে মুক্ত থাকবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
বর্তমানে সরকারী চাকুরে ও সুযোগ সুবিধাভোগী কয়েক লাখ মানুষ ছাড়া দেশের সীমিত আয়ের কোটি কোটি মানুষ অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষভাবে দিনমজুর, রিকশাচালকসহ দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের অবস্থা এখন শোচনীয়। এ অবস্থায় নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং এর ফলে আবারো লকডাউনে সবকিছু বন্ধ থাকার দরুন তাদের অবস্থা এখন বর্ণনাতীত খারাপ। এ অবস্থায় সরকারকে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এগিয়ে আসা জরুরী বলে আমরা মনে করি। উপরে বর্ণিত ‘আইডিয়া’ নামক সংগঠন প্যাকেজ সহায়তার অনুরূপ উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। তবে এদেশের ক্ষমতাসীনদের সমস্যা হচ্ছে, তারা নিজেদের অর্থাৎ দলীয় লোক ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করে না কিংবা অন্য কাউকে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ করাতে চায় না। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশী। দেখা গেছে, করোনা মহামারির শুরুতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা এই নিজস্ব ও দলীয় লোকেরা লুটপাট করেছে সবচেয়ে বেশী। হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণের অর্থ-লুটপাটে এরাই জড়িত। আশ্রয়ণের গাছ নির্মাণের দুর্নীতির মূল হোতা এই গোষ্ঠী। কিন্তু সরকার যদি নিজেকে শুধু দলীয় সরকার মনে না করে দেশের সকল দলসহ জনগণের সরকার বিবেচনা করে সকল শ্রেণীর মানুষকে এ ধরনের মহতী উদ্যোগে কাজে লাগাতো তবে এটা সুন্দর ও সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়িত হতো। প্রকৃত অভাবী, দুঃস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সহায়তা পেতো। অসৎ ও দুর্নীতিবাজ দলীয় লোকজন সাধারণতঃ সরকারের দেয়া বরাদ্দকে নিজেদের সম্পদ বলে মনে করে এবং এগুলো লুটপাট করলেও নিজেদের নেতানেত্রী ও দলীয় সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে মনে করে। আর জেনে শুনেই এই দুর্নীতিবাজদের মাধ্যমে অর্থ ও ত্রাণ বিতরণের সুযোগ করে দেয়া হয়। ফলে দরিদ্র ও অভাবী মানুষ বঞ্চিত হয়। মহতী উদ্যোগ পর্যবসিত হয় ব্যর্থতায়। এক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন এনজিও সংস্থা এবং সর্বদলীয় কমিটি গঠন করতে পারে। এতে অবাধ লুটপাটের সুযোগ কমে যাবে।
আমরা এসব কিছু বলছি এজন্য যে, এ মুহূর্তে দেশে একটি মারাত্মক সংকটের অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে এদেশের দরিদ্র মানুষকে সহায়তার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বর্তমান করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও লকডাউনের ফলে আরো বিপুল সংখ্যক মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। মারাত্মক খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের মাঝে। তাই এখন থেকেই তাদের সহায়তার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরী।
সর্বোপরি, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি, লকডাউন এবং চালসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয় বিবেচনায় এনে সাধারণ মানুষের আর্থিক দুর্ভোগ লাঘবে সরকারকে এখনি পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখা গেছে, বর্তমান করোনাকালীন সময়ে প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সরকার বস্তাভর্তি চাল ও অন্যান্য নিত্যপণ্য সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছে। যে কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি তা নিতে পারছে। এখানে দলীয় লোকজনের ফটোসেশন, আধিপত্য ও দুর্নীতির কোন বালাই নেই।
সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এমন দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া যদি এটা পারে, তবে বাংলাদেশ সরকার তা পারবে না কেনো? এ প্রশ্ন আমাদের। এ প্রশ্ন সকল সচেতন মানুষের। দরিদ্র-অভাবী এবং করোনা মহামারির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থ, পণ্য ও প্রনোদনাসহ অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন।