সিলেটে লকডাউন উপেক্ষিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২১, ৯:৪৯:২২ অপরাহ্ন
আহবাব মোস্তফা খান: চরম উদাসিনতা আর স্বাস্থ্যবিধির অনাগ্রহের মাঝেই সিলেটে কেটেছে লকডাউনের প্রথম দিন। দিনভর চলেছে ছোট যান, নির্বিঘ্নে নির্ভয়ে চলেছেন মানুষ। এতে সংক্রমণ ঝুঁিকর শংকা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
কাল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় মানুষ ও যানজটের চাপ কমলেও নগরীর ব্যস্ত সড়কে সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে চলেছে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত যানবাহন। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষেও তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। অধিকাংশকেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে চরম ঢিলেমি ভাব। দিনে নগরীর বন্দরবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, রিকাবিবাজার, জিন্দাবাজার, উপশহর, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, নাইওরপুল, মেডিকেল, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা এলাকাসহ প্রায় সব এলাকায় রিকশা-সিএনজি অটোরিকশা দেখা গেছে। চলছে পণ্যবহনকারী পিকআপ ভ্যান।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাতে কোর্ট পয়েন্টসহ নগরীর প্রায় সব রাস্তায় যান চলাচল করে। এমনকি রাতে নগরীতে টিসিবি’র ট্রাক থেকে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করতেও দেখা যায়। এসময় লাইনে শতাধিক মানুষের ভিড়ও ছিলো।
চলমান লকডাউনের বিরোধিতা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। দাবি জানিয়েছিলেন- মানবিক কারণে ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার। কিন্তু সেই আবেদনে তারা সরকারের তরফ থেকে সাড়া পাননি। এ কারণে গতকাল সকাল থেকে সিলেটের মার্কেট, বিপনী বিতান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু মার্কেট বন্ধ থাকলেও রাস্তা সরব থাকায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। একজন ব্যবসায়ী বলেন, এটা সরকারের দ্বৈতনীতি। সব বন্ধ, রাস্তা খোলা এটা কেমন আচরণ।
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলা রিক্সা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা যেন গতকাল ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমেছিলো। সুযোগ পেয়েই ভাড়া বৃদ্ধি করেছে দিগুণ। শিবগঞ্জ থেকে বন্দর বাজার, মেডিকেল থেকে বন্দর বাজারে যেখানে ১০ টাকা ভাড়া সেখানে ২০/৩০ টাকা পর্যন্ত নিতে দেখা যায় সিএনজি অটোরিকশা চালকদের। রিক্সা চালকরা তো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো। বন্দর থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত তারা ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত দাবী করে বসে। এ নিয়ে দিনভর বিভিন্ন জায়গায় চালক-যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতন্ডার চিত্রও দেখা যায়।
তবে কদমতলী ও কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। সেই সাথে সিলেট থেকে কোন ট্রেন ছেড়ে যায়নি এবং সিলেটে কোন ট্রেন আসেনি। কদমতলী টার্মিনাল ও সিলেট রেল স্টেশনে অনেকেই টিকেট না পেয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় টিকেট কাউন্টারও বন্ধ রাখা হয়েছে। সিলেট রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুসারে সিলেট রেলওয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। লক ডাউনের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ হবে।
এদিকে, মূল সড়কের পাশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে থাকা দোকানপাট প্রায় সবই খোলা। কোনো কোনো এলাকাতে দোকানের সাটার নামিয়ে চলছে পণ্য কেনা-বেচা। নগরীতে ছোট ছোট খাবার হোটেলও খুলতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অনেককে হোটেলে বসে খেতেও দেখা গেছে। বড় রেস্টুরেন্টগুলোতে সরকারের নির্দেশনা মেনে ভেতরে বসে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ রাখলেও ক্রেতাদের চাহিদা মতো খাবার প্যাকেট করে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে বসেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও কাঁচাপণ্যের বাজার।
লকডাউনে সিলেটের আদালত পাড়ায় বিচার প্রার্থীদের উপস্থিতি ছিলো কম। পাশাপাশি আইনজীবীদের উপস্থিতিও অন্য দিনের চেয়ে কম ছিলো। এছাড়া সিলেটের বেশ কয়েকটি আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিলো বলে আইনজীবী সূত্র জানায়। ব্যাংকগুলোতে বিধি মেনেই অর্ধ দিবস কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে। অন্য দিনের তুলনায় ব্যাংকে গ্রাহকের উপস্থিতি ছিলো কম। অন্যান্য সরকারী-বেসরকারী অফিসগুলোতেও ব্যস্ত দিনের চেয়ে চিত্র ছিলো ভিন্ন।
এদিকে, সোমবার স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাতে দেখা গেছে সিসিককে। নগরীর বিভিন্ন সড়কে পরিচালিত এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিজেন কুমার সিংহ। প্রথম দিনেই স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ও সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করায় ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৯ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া লকডাউনের নির্দেশনা অমান্য করে চলাচল করায় কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশাকেও জরিমানা করা হয়। এসময় সচেতনতা বাড়াতে সিসিকের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করা হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে পথচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এদিকে, দিনে নিষ্ক্রিয় দেখা গেলেও সন্ধ্যায় সরব হতে দেখা যায় পুলিশকে। নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ত বাজারে পুলিশকে দোকান-পাট বন্ধের ঘোষণা দিতে দেখা যায়। করোনা সংক্রমণের ২য় ঢেউ সামলাতে সারাদেশে ৭ দিনের লকডাউন কার্যকর হয় সোমবার থেকে। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এ লকডাউন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়।