মার্কেট বন্ধ, রাস্তা খোলা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১১:০১:৫৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :
বিকাল ৫ টায় প্রধান ডাকঘরের সামনের সড়কের চিত্র।
দুপুর ১২টায় কালিঘাটের চিত্র।
সকাল ১১ টায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চন্ডিপুল
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও সেই একই চিত্র সিলেটে। রাস্তা ছিলো খোলা। দিনভর চলেছে যানবাহন। কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই অবাধে চলেছেন মানুষ। পাড়া-মহল্লা ছিলো স্বাভাবিক দিনের মতোই। বন্ধ ছিলো কেবল বড় মার্কেট আর বিপনী বিতান। এজন্য নগরীতে লকডাউন ভেঙ্গে মানববন্ধন ও মিছিল-সমাবেশও করেছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও পুলিশের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে যথারীতি সিটি করপোরেশনের অভিযান ছিলো। সিসিক ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মামলা হয়েছে, জরিমানাও হয়েছে। অভিযানে ছিলো জেলা প্রশাসনের টিমও। তবে এসব অভিযান কেবল অভিযানেই সীমাবদ্ধ ছিলো। প্রভাব পড়েনি ব্যস্ত নগরীতে।
মঙ্গলবার নগর ঘুরে সকাল থেকে রাস্তায় রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) চলাচল ছিল আরো বেশী। কেবল বিমান, ট্রেন, দূরপাল্লার বাসসহ গণপরিবহন ছিলো বন্ধ। উপস্থিতি কম হলেও অফিস-আদালত ছিলো খোলা। ব্যাংকগুলো যথারীতি সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চালায়। চা দোকানগুলোতে আড্ডাও ছিলো স্বাভাবিক। ফুটপাত ছিলো লোকে লোকে লোকারণ্য। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেশী হলেও চাকরিসহ নানা কাজে বের হওয়া মানুষকে দ্বিগুণ ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। কালও একধরনের ভাড়া নৈরাজ্যে মেতে ছিলেন রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা। যে যেভাবে পেরেছে ভাড়া আদায় করেছে। মটর সাইকেল রাইডাররাও অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী বহন করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে নির্বিকার ভুমিকায় প্রশাসন।
বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, অফিস-আদালত খোলা রেখে এ আবার কেমন লকডাউন। তাঁর কর্মস্থল বিশ্বনাথে। প্রতিদিন তিনি শহর থেকে ৩০ টাকায় কর্মস্থলে পৌঁছান। কিন্তু মঙ্গলবার তাঁর যেতে ১৫০ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিনও একইভাবে কষ্ট করে অফিসে গিয়েছি, ফিরেছি। সেদিনও খরচ হয়েছে ১৬০ টাকা। অফিস যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এভাবে চললে বেতনের একটা অংশ তো যাতায়াতেই চলে যাবে।’ এদিকে, চলমান বিধিনিষেধ বা লকডাউন মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন- এই লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিত হচ্ছে না। এ নিয়ে কাল দুপুরে লকডাউনে মার্কেট ও দোকানপাট খোলার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ মার্কেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে নগরীর কোর্টপয়েন্ট এলকায় মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকারের বিধিনিষেধ নিয়ম মেনেই তারা মার্কেট খুলতে চান। এ কারণে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে মানববন্ধন করছেন। তারা জানান- এই কর্মসূচির আগে লকডাউনে মার্কেট আওতামুক্ত রাখতে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও চেম্বারকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি। তাদের প্রশ্ন মার্কেট বন্ধ, তবে রাস্তা খোলা কেন ?
এসময় একজন ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকার ভাবুক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না টিকলে দেশও টিকবে না। আমরা নির্দিষ্ট একটা সময় মার্কেট খোলা রাখতে চাই। রমজানে দোকান খোলা না থাকলে কী হবে, জানি না। গত বছরের ক্ষতিই পুষিয়ে উঠতে পারিনি।’ এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন ওই ব্যবসায়ী।
এদিকে, লকডাউনের মাঝে সিলেটে আন্ত:জেলা গণপরিবহন চলাচল করবে বলে দৈনিক জালালাবাদকে জানিয়েছেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাল (আজ বুধবার) থেকে বাস চলাচল করবে।
দূরপাল্লার বাসগুলো চলাচল করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দূরপাল্লার বাসগুলো চলাচল না করার সম্ভাবনা রয়েছে।