বেড়েছে সংক্রমণ, কমেছে টিকা গ্রহণ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১২:০১:০২ অপরাহ্ন
আহবাব মোস্তফা খান :
সিলেটে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। বেড়েছে মৃত্যুও। এ অবস্থায় যেখানে ভ্যাকসিন গ্রহণের হার বাড়ার কথা, সেখানে অতিমাত্রায় কমেছে ভ্যাকসিন গ্রহণ। শুরুর পর টানা ২ মাস দৈনিক ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর সংখ্যা হাজারের উপরে ছিলো, অথচ বুধবার সিলেটে এ সংখ্যা নেমে আসে ৪শ’ তে। এ নিয়ে যেমন হতাশা স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের, তেমনি সংক্রমণ বৃদ্ধির চরম শঙ্কাও তাদের।
গণটিকা কার্যক্রমের শুরুতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা দেখা দেখা দেয়। কেন্দ্রে কেন্দ্রে লেগে থাকে ভীড়। এতে প্রথম ১০ দিনেই সিলেটে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। এ সময়ে বিভাগের চার জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৭২৬ জন টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। টিকা গ্রহণ করেন ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৯ জন। এমন আশাব্যঞ্জক চিত্র দেখে আশায় যেন বুক বাঁধেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু তাদের এই আশা যেন হতাশার চোরাবালিতেই আটকে গেছে। সিলেটে দৈনিক ভ্যাকসিন গ্রহণের সংখ্যা নেমেছে হাজারের নিচে। চার অঙ্কের ঘর থেকে নেমে এসেছে তিন অঙ্কের ঘরে। কমেছে টিকার নিবন্ধনও।
এ মাসের প্রথম ৭ দিনের চিত্রই বলে দেয় ভ্যাকসিন গ্রহণের অনাগ্রহী হয়ে উঠেছেন সিলেটের মানুষ। ১ এপ্রিল সিলেটে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন ২৫৮৯ জন, ৩ এপ্রিল ১৭১১ জন, ৪ এপ্রিল একটু বৃদ্ধি পায়, সেদিন গ্রহণ করেন ৩৪১২ জন, ৫ এপ্রিল ২৮১৯ জন, ৬ এপ্রিল চার অঙ্কের ঘর থেকে নেমে ৮৯৫ জনে দাড়ায়। আর গতকাল ৭ এপিলের চিত্র আরো হতাশার। কাল ভ্যাকসিন নিয়েছেন আগের দিনের প্রায় অর্ধেক মাত্র ৪১৯ জন। এর মাঝে সিলেটে ১৫২ জন, সুনামগঞ্জে ৯১ জন, হবিগঞ্জে ৮৯ জন ও মৌলভীবাজারে ৮৭ জন।
অথচ কালও সিলেটে করোনা চোখ রাঙিয়েছে। ২৪ ঘন্টায় সিলেটে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা ২৯৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১৪২ জন। তাদের নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে। তবুও টিকাগহণে অনিহা নিয়ে প্রশ্নের কোন শেষ নেই।
টিকাগ্রহনের এমন নিম্নমুখি ধারায় হতাশার পাশাপাশি শঙ্কাও প্রকাশ করলেন বিভাগীয় সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক মো: আনিসুর রহমান। কেন টিকাগহণে ধস এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জালালাবাদকে বললেন, এর মূল কারণ হতে পারে তিনটি। প্রথমত প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনার ভয়াবহতার বিষয়ে সচেতনতার অভাব, দ্বিতীয়ত রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলা, তৃতীয়ত আগ্রহ কমে যাওয়া। এখন আবার নতুন শুরু হয়েছে লকডাউন।
এদিকে, প্রথম ডোজ গ্রহণের নিম্নমুখি ধারার মাঝে আজ শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ প্রদান কার্যক্রম। এ বিষয়ে আনিসুর রহমান বলেন, যারা ইতিমধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন তারা অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজ গহণ করবেন। এজন্য সিলেটে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা হয়েছে।
গতকাল পর্যন্ত ৬০ দিনে সিলেট বিভাগে ভ্যাকসিন নিয়েছেন মোট ২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩৯৪ জন। এর মাঝে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৯ হাজার ১২২ জন, মৌলভীবাজারে ৬৪ হাজার ৮০৮ জন, সুনামগঞ্জে ৫৯ হাজার ৭৬৩ জন ও হবিগঞ্জে ৫৫ হাজার ৭০১ জন।
নিবন্ধন করেছেন মোট ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭১০ জন। এর মাঝে সিলেটে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৯৩ জন, মৌলভীবাজারে ৭৮ হাজার ৫৫ জন, হবিগঞ্জে ৭০ হাজার ৮০২ জন ও সুনামগঞ্জে ৬৯ হাজার ২৬০ জন।
সিলেটের ১২ উপজেলা ও মহানগর মিলে মোট ৪১টি কেন্দ্রে একযোগে ৭ ফেব্রুয়ারী শুরু হয় ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম।
চিকিৎসকরা বলছেন, চারটি হাতিয়ার দিয়ে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব। করোনার টিকা নেওয়া, নিয়মিত মাস্ক পরিধান, বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা। করোনার টিকা নিলেই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে মানুষের। তবে টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে। কিন্তু চিকিৎসকদের এই কথাগুলোর ধারেকাছেও নেই কেউ। যা প্রবাসীবহুল সিলেটের জন্য ‘এলার্মিং’ ই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।