পণ্য কিনতে টিসিবি’র ট্রাকমুখো মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৫:২৪ অপরাহ্ন
আজ থেকে মুরগী, ডিম, দুধ বিক্রি করবে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর
মামুন পারভেজ: রমজান মাস শুরুর আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি, রোজার আগে লকডাউনের অজুহাতে বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও লকডাউনের কারণে বাজারে ক্রেতা কমেছে, ক্রেতা বেড়েছে টিসিবির ট্রাকে। খুচরা বাজারে বেড়েছে চাল, ডাল, ছোলা, তেল, আদা রসুন সহ নিত্য পণ্যের দাম। মার্কেট ও শপিংমল খুলে দেয়ার খবর প্রচার হবার পর ব্রয়লার মুরগীর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। লকডাউনের আগে ব্রয়লার মুরগী কেজি ১৪০ টাকা বিক্রি হলেও আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
নিরুপায় মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর ট্রাকের সামনে। তবে পাইকারী বাজারে পণ্যের দাম বাড়েনি বলে জানান নগরীর সবচেয়ে বড় পাইকারীর আড়ৎ কালীঘাটের ব্যবসায়ীরা। পাইকারী বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা হলেও খুচরা বাজারে প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বলে জানান ক্রেতাসাধারণ।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে টিসিবির ট্রাকে সাধারণ মানুষকে পণ্য কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রতিদিন ট্রাকে করে টিসিবি থেকে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে। আর সিলেট নগরের ৮টি পয়েন্টে প্রতিদিন ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
নগরের বাগবাড়ি পিডিবি মসজিদ মোড়, মদিনা মার্কেট, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ, রিকাবীবাজার, টিলাগড় পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্ট, রেজিস্টারি মাঠ ও শাহী ঈদগাহ পয়েন্টে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
নগরীর প্রায় ৮টি খোলা ট্রাকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানালেন সিলেটের বাজার কর্মকর্তা শাহ মোহাম¥দ মোর্শেদ কাদের। তিনি বলেন, ‘সিলেট নগরী ছাড়াও জেলার প্রায় ২৭টি এলাকায় পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। সকাল থেকে দুপুরের মধ্যেই এক ট্রাক পণ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতিদিনের পণ্যের স্টকের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে টিসিবির খোলা ট্রাক থেকে বিক্রি করা পণ্যের মূল্য বাজারের পণ্যের চেয়ে কম। চিনি কেজি ৫৫ টাকা, মশুর ডাল কেজি ৫৫ টাকা, সয়াবিন তেল লিটার ১০০ টাকা, পেঁয়াজ কেজি ২০ টাকা, ছোলা কেজি ৫৫ টাকা এবং খেজুর কেজি ৮০ টাকা হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।’
লকডাউনের কারণে বাজারে মালামালের ঘাটতি বা দামের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্টসূত্র জানায়, বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলাপ্রশাসকের নেতৃত্বে ৫টি টিম গঠন করা হচ্ছে। রমজান মাসের আগেই কাজ শুরু করবে এই ৫টিম। এদিকে, রমজান উপলক্ষে খোলা বাজারে মুরগী, ডিম ও দুধ বিক্রি করবে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সিলেট। আজ নগরীর ৪টি পয়েন্টে সকাল ১০টায় এ কার্যক্রম শুরু হবে।
এব্যাপারে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রুস্তম আলী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, ৪৫ দিনের একটি প্রজেক্টের আওতায় সিলেটে আগামীকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার সকাল ১০টায় খোলা বাজারে মুরগী, ডিম ও দুধ বিক্রি শুরু করবে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। খামারিদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিক্রি করা হবে। আস্তেধীরে এর পরিধি আরও বাড়বে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে, লকডাউনের পাশাপাশি রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা শুরু করেছে ক্রেতারা। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বিভিন্ন বাজারে মানভেদে সব ধরনের চাল, সয়াবিন তেল, মশুর ডাল, খেজুর, আলু, দেশি রসুন, আদার দাম বেশি দেখা গেছে।
বন্দরবাজারে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল ৬২-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাইজাম প্রতি কেজিতে ২-৪ টাকা বেড়ে ৫৪-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২-৫ টাকা পর্যন্ত।
খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি ৫ লিটারে ১০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬৪০-৬৬০ টাকায়। মানভেদে প্রতি কেজি মশুর ডালের দাম ৮০-১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭৫- ৯০ টাকা।
এদিকে, পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের খুচরা পর্যায়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। দু’দিন আগে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৪০ টাকা কেজি। অপরদিকে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯-৩০ টাকা, যা দু’দিন আগে ছিল ৩৫ টাকা।
কালীঘাটের পেঁয়াজ বিক্রেতা তাহির মিয়া বলেন, পেঁয়াজের দাম দু’দিন আগেই দু’দফা দাম বেড়ে কেজি ৪০ টাকা হয়েছিল। এখন আবার দাম কমে ৩৫ টাকা হয়েছে। দাম কমলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দু’দিন ধরে পেঁয়াজের বিক্রি নেই বললেই চলে। এ অবস্থা থাকলে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে।
কালীঘাট চাল বাজার ব্যবসায়ীক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুখ আহমদ দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, পাইকারী বাজারে চালের দাম বাড়েনি। রমজানের প্রথম সপ্তাহে চাল আমদানি করা হলে দাম কমতে পারে।
টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাড়িয়ে থাকা রিকশা চালক রমিজ মিয়া জানান, লকডাউনে আয় রোজগার একেবারে কমে গেছে। সারাদিনে যে জায়গা ৬ থেকে ৭ শ’ টাকা আয় হতো সেই জায়গায় মাত্র ২শ’ টাকা আয় করেছি। এখন রিকশার জমা দিব কি আর খাবার কিনবো কি?
লালবাজারে স্কুল শিক্ষক মাহবুব জানান, ‘প্রতিবছরই রোজা আসলে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী মিলে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরামূল্য বাজারের খোলা স্থানে, ক্রেতাদের চোখের সামনে ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।’ এই ব্যাপারে তাদের বাধ্য করতে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায়, লকডাউনের কারণে বাজারে মালামালের ঘাটতি বা দামের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানান বাজার কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের। তিনি বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। পণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও দামও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর নিয়মিতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করছে। এছাড়া, বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলাপ্রশাসকের নেতৃত্বে ৫টি টিম গঠন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চেম্বার সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রতিনিধি দেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। রমজান মাসের আগেই মাঠে নামবে এই ৫টিম। এছাড়া, রমজান উপলক্ষে নগরীর ৪টি পয়েন্টে মুরগী, ডিম ও দুধ বিক্রি করবে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সিলেট। ক্রেতাদের অনেকে লকডাউন শুরুর আগের দিন হুজুগে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে স্টক করেছেন। স্টক করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করার জন্যও ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।