অন্তসারশূণ্য লকডাউন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ৯:১৪:৩৮ অপরাহ্ন
৭ দিনের লকডাউন ৪ দিনে শেষ!
জালালাবাদ রিপোর্ট: সরকার ৭ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করলেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে কার্যত ৪ দিনেই তা সমাপ্ত হয়েছে দোকানপাট বন্ধের বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে। যদিও সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে বিধি নিষেধের ব্যাপারে কোন ঘোষণা এখনো আসেনি।
কথা হচ্ছে, এই ৪ দিনে দেশ ও জনগণের লাভের তুলনায় কতোটুকু ক্ষতি হয়ে গেলো, তা একমাত্র পরিসংখ্যানবিদরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে সাধারণ মানুষ এই ৪দিনে যে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, তা সহজে ভুলতে পারবেন না। লকডাউন এমন একটি বিষয়, যা সংক্রমণ ঠেকানোর একটি থার্ড ডিগ্রি মেজারমেন্ট বা চরম পদক্ষেপ। তাই এটা দেয়ার আগে প্রস্তুতি, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সরকারের কোন বাহিনী বা সংস্থাকে এই লকডাউন কার্যকরে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ফলে লকডাউন হয়ে পড়ে ঢিলে ঢালা ও অকার্যকর।
জনগণ করোনা সংক্রমণে সুষ্টু পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা মানতে রাজী। শত অসুবিধা সত্ত্বেও তারা এই ৭ দিনের লকডাউন মেনে নিতো। কিন্তু ঘোষণার পর এর বাস্তবায়নে কোন উদ্যোগ না থাকায় সৃষ্টি হয় এক জগাখিচুড়ি বা বিশৃঙ্খল অবস্থা। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত এই পদক্ষেপ। এছাড়া দিন মজুর ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য নিদেনপক্ষে আগের লকডাউনের মতো কিছু খাদ্য তথা ত্রাণ সামগ্রী সহায়তার ব্যবস্থা করা যেতো। কিন্তু এদিকেও সরকারের কোন মনোযোগ ছিলনা।
গত ৪ দিনের লকডাউনে শুধু যে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এমন নয়। এজন্য বিক্ষোভ করতে গিয়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। রক্ত ঝরেছে নিরীহ মানুষের। অনেক ব্যবসায়ীকে ব্যবসাবাণিজ্যের এই মন্দা সময়ে বিপুল অর্থ জরিমানা গুণতে হয়েছে। অনেককে যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে অফিসসহ বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করতে হয়েছে। এভাবে কিছু সুবিধাভোগী মানুষ ছাড়া সকল স্তরের মানুষকে বিস্তর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে দেয়া লকডাউনে কী লাভ হলো? কার লাভ হলো? অনেকের মতে এটা ছিলো পলিটিক্যাল লকডাউন। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ঠেকাতে এধরনের আকস্মিক ও অপরিকল্পিত লকডাউন দেয়া হয়। করোনা সংক্রমণের অজুহাতে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। অনেকে এর পেছনেও একই অশুভ উদ্দেশ্যের অভিযোগ করছেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হয়েছে। কিন্তু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অন্ধকারের পথে গেলেও সরকার এ ব্যাপারে অনড়। হাটবাজার রাস্তাঘাট, খেলা, মেলা সবকিছু খোলা থাকলেও একগুঁয়ের মতো বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
শেষ পর্যন্ত সরকার এই অপরিকল্পিত অর্থহীন এবং লাভের চেয়ে ক্ষতিকর লকডাউনের অন্তঃসারশুন্যতা বুঝতে পেরেছে। এক্ষেত্রেও ক্ষমতাসীনদের একটি অসৎ ও অসাধু অংশ বা দালাল শ্রেণীর লোক বাগড়া দিতে চাইছে। চাইছে কোন না কোন অজুহাতে আবারো লকডাউনের। তবে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তারা আর্থিক দিক দিয়ে পথে বসার উপক্রম। তাই তারা এধরনের লকডাউনের কোন পাঁয়তারা বরদাশত করবেন না।