প্রশ্নের মুখে ২৬ লাখ টাকার হাত ধোয়া প্রকল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩০:৫০ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
হাত ধোয়ার বেসিন ও পানির ড্রাম আছে, নেই পানি-সাবান। কোথাও পানি ভর্তি আবার কোথাও ময়লা জমে আছে। নেই হাত ধোয়ার সাবান। ড্রামগুলোতে উপচে পড়ছে ময়লা পানি, জমেছে শেওলা। এ থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। কর্তৃৃপক্ষের উদাসীনতায় নগরীতে হাত ধোয়ার বেসিনগুলো অকেজা হয়ে পড়ে আছে। করোনাকালীন সময়ে প্রথম ধাপের বেশ তড়িঘড়ি করেই বেসিনগুলো বসানো হয়েছিলো। কিন্তু মাস না পেরোতেই অনেক বেসিন নষ্ট হয়ে যায়।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পথচারীদের হাত ধোয়ার জন্য নগরীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে ও ওয়ার্ডে বেসিন বসায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। জনসমাগম হয়, এমন জায়গাগুলোতে ৬০টি বেসিন ও পানি ড্রাম স্থাপন করা হয়। এরপর পানি-সাবান সরবরাহ করা হলেও কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রতিদিন সাবান-পানিসহ পরিচর্যা বাবদ ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে সিসিক জানায়।
ড্রাম-বেসিন আছে
নেই পানি-সাবান
এদিকে, সরকারী অর্থ অপচয়ের কারণে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। জনমনে নানা প্রশ্ন ওঠেছে সিসিকের হাত ধোয়া প্রকল্প নিয়ে। এ অবস্থায় সরকার থেকে আরো ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগর ভবনের গেইটের ভেতরে, রিকাবীবাজার, সুবিদবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুবহানীঘাটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও পানির ড্রাম বসানো হয়। করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলেও এখন আর বেসিনগুলোতে হাত ধোয়ার উপকরণ রাখা হয় না। ফলে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকস্থানে বেসিন ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। ড্রামের ভেতরে কেউ ময়লা রাখছেন। অব্যবহৃত এসব পানির ড্রাম সরিয়ে না নেওয়ায় চুরিও হয়ে গেছে।
রোববার বিকেলে সিটি কর্পোরেশনের মূল ফটকের গিয়ে দেখা যায়, হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে পানি থাকলেও নেই সাবান। আশপাশে পানি জমে নর্দমায় পরিণত হয়েছে। এ যেনও দেখার কেউ নেই। আর বেসিনটি দেখে মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে এসব ব্যবহার করা হয়নি। নোংরা যার ফলে সিসিকে প্রবেশের সময় সাধারণ মানুষ হাত না ধুয়েই প্রবেশ করছেন। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রামণ বাড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
রিকাবিবাজারের জেলা স্টেডিয়ামের সামনে ফুটপাতে বেসিনের পাশে এক চটপটি বিক্রেতা জানান, করোনা শুরুর প্রথম দিকে সাবান দেওয়া হয়েছিলো। এখন পানিও নেই, সাবানও নেই। তারপর আর কে কার খবর রাখে। উপশহর পয়েন্টের এক ব্যবসায়ী বলেন, হাত ধোয়ার বেসিনগুলোতে সিসিকের অব্যবস্থাপনার সাক্ষি হয়ে আছে। বেসিনগুলো ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে।
নগরীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবুল মনসুর মো. ফারুক সেলিম বলেন, করোনা প্রতিরোধে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধোয়া কার্যকরী পদক্ষেপ, যা চিকিৎসকসহ সবাই বলছেন। মানুষের হাত ধোয়ার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে বেসিন বসানো হয়েছে শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য।
সার্বিক বিষয় নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি জালালাবাদকে বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষায় হাত ধোয়ার জন্য ৬০টি বেসিন বসানো হয়। এসব বেসিনে প্রতি সপ্তাহে ১০০টি সাবান দেওয়া হতো। এছাড়া ২৪ ঘন্টা সাবান-পানি সরবরাহের জন্য একটি গাড়িসহ চালক ও একজন কর্মী দেওয়া হয়। সেগুলোতে সাবান পানিসহ সার্বিক খরচ ২৬ লাখ টাকা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে সিসিকের এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, যাদেরকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো তারা যথাযথভাবে পালন করেনি। মেরামতের দায়িত্বে থাকা লোকজনও দায়িত্বে অবহেলা করেন। অনেকগুলোর টেপ খুলে নেওয়া হয়েছে সেগুলো মেরামত করে জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী করা হবে।