১২ ঘন্টা পর বিদ্যুৎ পেল সিলেট, দিনভর সীমাহীন দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০২১, ৯:২৩:১১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: গরম আসতে না আসতেই সিলেট নগরীতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বেড়েই চলেছে। নগরের কোনো কোনো এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে ১২-১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। গ্রাহকের এই ভোগান্তির পেছনে লোডশেডিং নয়; উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ। পুরোনো সরবরাহ লাইনকে মেরামতের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে বলে জানান পিডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
উন্নয়ন কর্মকান্ডের অজুহাতে সপ্তাহে দু তিন দিন নগরীর কোন না কোন এলাকা ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকছে। দিনে ৯ ঘন্টা থেকে ১৩ ঘন্টাও বিদ্যুৎ না থাকার নজির রয়েছে। শনিবার ঘোষণা দিয়ে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় প্রায় ১১ ঘন্টা বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিলো। যদিও ১০ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানায় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ ও ২। এতে করে দিনভর জনভোগান্তি ছিল চরমে। সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকায় দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি ব্যবসায়ী এবং কর্মজীবি মানুষ বিপাকে পড়েন। দিনভর পানির সংকট ছিল চরমে। ভ্যাপসা গরমে শিশু ও বৃদ্ধ অসুস্থ হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহের লকডাউনের পর গতকাল দোকানপাঠ খোলে কিছু ব্যবসার চিন্তা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা কিন্তু দিনভর বিদ্যুৎ না থাকায় বাজার থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়া, অনলাইনে যারা ফিল্যান্সিং করেন তাদের কাজেও ব্যাঘাত ঘটেছে।
সম্প্রতি হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। এমন কোন সপ্তাহ বাকী নেই যে উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে নগরীর কোন না কোন এলাকা ৭ থেকে ১৩ ঘন্টা লোডশেডিং হয় না। এমনকি মাঝে একই এলাকায় একাধিকবার বিদ্যুৎবিহীন থাকার ঘটনাও ঘটছে। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে।
সচেতন মহলের দাবী, এভাবে নোটিশ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন রাখা থেকে জনসাধারণকে মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশ অনেক এগিয়েছে সকল ক্ষেত্রে এখন উন্নয়ন ও অগ্রগতির ছোঁয়া। মান্ধাতার আমলের ক্যাবল সিস্টেম থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আসন্ন রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে বিদ্যুৎবিহীন রাখাকে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে। এ ব্যাপারে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ- ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ড একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজ শনিবার প্রায় ১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো। তবে রমজান মাসে এধরণের দীর্ঘ সময় শাট ডাউন পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে দুর্ঘটনাজনিত কারণে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমরা সমস্যা শুনামাত্রই সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকি। আসন্ন রমজান মাসে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ২ এর আওতাধিন এলাকায় বিদ্যুতের কোন সমস্যা হবেনা বলে আশ^স্ত করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটে সরকারিভাবে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ যোগান দেয়া হয়। আর এখানে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, সিলেটে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই। আসন্ন রমজানেও বিদ্যুৎ নিয়ে কোন সমস্যা হবেনা। তবে একাধিক সূত্রে জানা যায়, গেল বছরের মে মাসে কুমারগাও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর থেকে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে। সেই ক্ষত এখনো সারিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও সিলেট ঝড়বৃষ্টি প্রবণ এলাকা। ফলে চাহিদামাফিক সরবরাহ পেলেও ঝড়ে ছিঁড়ে যায় বিদ্যুতের লাইন। তাই দেখা দেয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট। তবে সবচেয়ে বেশী বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে মান্দাতা আমলের লাইনের কারণে।