সিলেটে করোনার আইসিইউ খালি নেই, সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জে নেই আইসিইউ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩০:২৩ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল:
করোনার ২য় ঢেউয়ে দেশের ন্যায় সিলেটেও বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। নতুন করে গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৩ জন। এই সময়ে মারা গেছেন আরো ২ জন। মৃত দুজনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে সিলেট বিভাগে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৭৬ জনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। এর আগে শনিবার সিলেটে আক্রান্ত হন ১৯৫ জন। এই সময়ে মারা যান আরো ১ জন, তিনি মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা।
দ্রুতগতিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়লেও সেভাবে প্রস্তুতি নেই সিলেটে। আইসিইউ ইউনিটের ক্ষেত্রে সংখ্যার দিক থেকে খুবই পিছিয়ে আছে সিলেট। বিভাগের ৪টি জেলায় আইসোলেশন সংখ্যা সহস্রাধিক থাকলেও গোটা বিভাগে আইসিইউ আছে মাত্র ৩৯টি। এর মধ্যে ২টি নষ্ট থাকায় বর্তমানে সচল আছে মাত্র ৩৭টি আইসিইউ। এর মধ্যে সরকারী মাত্র ১৯টি। বিভাগীয় শহর সিলেট ছাড়া শুধুমাত্র মৌলভীবাজারে আছে মাত্র ৫টি আইসিইউ বেড। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় কোন আইসিইউ নেই। ফলে করোনাক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির এই কঠিন সময়ে কঠিন পরিস্থিতির সম্মূখীন হতে যাচ্ছে সিলেট। ফলে জনমনে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। সিলেটে আইসিইউ ও আইসোলেশন বেড বাড়াতে উদ্যোগের খবর শুনা গেলেও এর ফলাফল নিয়ে রয়েছে শংকা। শনিবার বিকেলে ২৩ বেডের করোনা ইউনিট চালুর পাশাপাশি ১১টি আইসিইউ ইউনিট চালুর ঘোষণা দিয়েছে নুরজাহান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে সিলেট বিভাগের ৩৭ টির সাথে আরো ১১টি যোগ হয়ে ৪৮ টিতে উন্নীত হয়েছে আইসিইউ বেড। এদিকে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬টি করোনা আইসিইউ ইউনিট রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। ফলে সিলেটে আইসিইউ ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ টিতে। তবুও যে হারে প্রতিদিন এর চাহিদা দেখা যাচ্ছে সে অনুযায়ী সিলেটে প্রয়োজন শতাধিক আইসিইউ ইউনিটের।
জানা যায়, দেশের ন্যায় সিলেটেও আইসিইউ বেডের জন্য সর্বত্র চলছে হাহাকার। এই নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পক্ষ থেকে চাহিদাপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এই সময়ে সারাদেশেই বাড়ছে করোনাক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারীভাবে নতুন করে আইসিইউ বেড বাড়ানোর সম্ভাবনা কম। তবে এই মুহুর্তে সিলেটের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো ২০০ আইসোলেশন বেড বাড়ানোর একটা প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে সিলেট বিভাগের একমাত্র বিশেষায়িত করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র ‘শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল’-এ ১০০ আইসোলেশন বেডের পাশপাশি ১৬ টি আইসিইউ ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ২টি নষ্ট থাকায় ১৪ টি আইসিইউর সবকটিতে রয়েছেন করোনা রোগী। নতুন কোন রোগী আসলে কোনভাবেই আইসিইউ দেয়া সম্ভব নয় বলেও জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে বেসরকারীভাবে সিলেটের নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি, মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ৮টি, নুরজাহান হাসপাতালে ১১টি, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেহ হাসপাতালে ৬টি ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ৫টি আইসিইউ বেড চালু আছে। তবে বেসরকারী চিকিৎসা সেবা ব্যয়বহুল থাকায় সবার চাহিদা শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার। কিন্তু সেখানে ১০০ আইসোলেশন বেডের বিপরীতে মাত্র ১৪ টি আইসিইউ বেডে রোগীদের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে আইসিইউ না পেয়ে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল থেকে একাধিক রোগীকে ফিরে যেতে হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারী হাসপাতালের কোন আইসিইউ বেড খালি নেই বলেও ঐসব হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। বেসরকারী চিকিৎসা খাতে ব্যয় বেশী হওয়ায় অনেকে সামর্থ্য না থাকায় আইসিইউ বেড নিতে পারছেন না। ফলে অনেকে করোনার মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন ।
এব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নুরে আলম শামীম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সাধ্যমত করোনাক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে। নতুন করে আইসিইউ বেড তৈরী করা কঠিন কাজ, তবে এব্যাপারে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আপাতত আমরা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা যুক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডারের দিকে নজর দিচ্ছি। এব্যাপারে ইতোমধ্যে একটি চাহিদাপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কারণ করোনা আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ঠজনিত সমস্যা হলে প্রথমে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে পারলে আইসোলেশন বেডে রেখে সেই রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। ফলে আইসিইউতে পাঠানোর চাপ অনেকটা কমে যাবে। শীঘ্রই সিলেটে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংযোজন হতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। এজন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অন্তত ২০০ আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সচেতন মহলের দাবী, করোনার ২য় ঢেউয়ে সারাদেশের ন্যায় সিলেটের মানুষও আতংকিত। বিভাগীয় শহর হিসেবে সিলেট নগরীতে সরকারী ও বেসরকারী হিসেবে মাত্র ৪৯ টি আইসিইউ ইউনিট থাকা দুঃখজনক। বিগত সময়ে বেসরকারী চিকিৎসা সেবার বিল নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। আর সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল সরকারী হাসপাতালগুলো। এক্ষেত্রে শামসুদ্দিন হাসপাতালের ২টি নষ্ট আইসিইউ জরুরী ভিত্তিতে মেরামত ও সরকারী হাসপাতালে আরো কয়েকটি আইসিইউ স্থাপন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।