আহলান সাহলান মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১১:০০:৪৯ অপরাহ্ন
সাইদ আল মাদানী: আজ ১ রমজান ১৪৪২ হিজরি। একটি বছর পরে এবার এলো মাহে রমজান। রহমত, বরকত ও নাজাতের বার্তা নিয়েই প্রতি বছর উম্মাহ মুসলিমার জন্য আগমন করে এই পবিত্র মাস। রাসূল (সা.) সাহাবীদের রমজানের শুভাগমনের সুসংবাদ দিতেন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গী-সাথীদের এ মর্মে সুসংবাদ শোনাতেন, ‘তোমাদের সমীপে রমজান মাস এসেছে। এটি এক মোবারক মাস। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এতে জান্নাতের দ্বার খোলা হয়।
বন্ধ রাখা হয় জাহান্নামের দরোজা। শয়তানকে বাঁধা হয় শেকলে। এ মাসে একটি রজনী রয়েছে যা সহস্র মাস হতে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে যেন যাবতীয় কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল’। [সুনানে নাসায়ী, মুসনাদ আহমাদ]। আমরা যদি রাসূল (সা.) এর বাণী নিয়ে একটু চিন্তা করি তাহলে একজন মুমিন বান্দার মনকে কল্যাণমূলক কাজের প্রতি উজ্জীবিত করে তুলে। যারা আনুগত্যশীল, তারা এ মাস নেক কাজ আরো বাড়িয়ে দেয়। তারা ভালো কাজের মাধ্যমে রমজানের দিবস-রজনী যাপনের মানসিকতা নিয়ে রমজানকে স্বাগত জানায়। যারা পাপী, তাদের জন্য এ মাস পাপ থেকে ফিরে আসার। একজন মুমিন বেহেশতের দরজাসমূহের উন্মুক্তিতে খুশি না হয়ে পারে না? এ এক বিশাল সুযোগ যা থেকে মাহরুম ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ বঞ্চিত হয় না।
অতঃপর আমাদের আরো সিরিয়াস হতে হবে, ঐকান্তিকতা ও সওয়াবের আশায় এ সিয়াম পালন করতে হবে। সুতরাং রমজান মাসের আগমনে আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে আমাদের প্রথমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে এ মাসকে বরণ করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বল আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম’। (সূরা ইউনূস-৫৮)।
আমাদের বাড়িতে বিশেষ কোনো বিশেষ মেহমান আসার তারিখ থাকলে আমরা পূর্ব থেকেই নানা প্রস্তুতি নেই। অপেক্ষা করতে থাকি মেহমানকে সসম্মানে বরণ করে নেবার জন্য। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, এ মাস আসার সাথে সাথেই এর যথার্থ মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই রমজান আসার পূর্ব থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। শাবান মাসে অধিকহারে নফল রোজা পালনের মাধ্যমে তিনি রমজানে সিয়াম সাধনার আগাম প্রস্তুতি নিতেন। কারণ মাসটি পেয়েও যে এর উপযুক্ত মূল্য দিল না, বেশি বেশি পূণ্য আহরণ করতে পারলো না এবং জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের পরোয়ানা পেল না, সে বড় হতভাগ্য।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো এমন ব্যক্তি আল্লাহর ফেরেশতা ও খোদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বদদুয়ার অধিকারী। কারণ এমন ব্যক্তির ওপর জিবরাঈল আলাইহিস সালাম লানত করেছেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে ‘আমীন’ বলেছেন! আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতপর বললেন, আমীন, আমীন, আমীন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, এটা আপনি কী করলেন? তিনি বললেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক-যার সামনে রমজান প্রবেশ করলো অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না। আমি শুনে বললাম, আমীন। এরপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যার সামনে আপনার কথা আলোচিত হয় তথাপি সে আপনার ওপর দরূদ পড়ে না। তখন আমি বললাম, আমীন। অতপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যে তার পিতামাতা বা তাঁদের একজনকে পেল অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না। তখন আমি বললাম, আমীন। [সহীহ ইবন হিব্বান]।
সুতরাং আমাদের সকল গুনাহ থেকে তাওবার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। সকল প্রকার জুলুম অন্যায় থেকে বের হয়ে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। যাদের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাদের কাছে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে রমজানকে স্বাগত জানাতে হবে। এ ধরনের আবেগ অনুভূতির মাধ্যমেই আশাসমূহ পূর্ণ হয়। অত:পর! আসুন আমরা রমজানের হাকীকত জানি। রমজানের আদব ও আহকাম জানি। রমজানে সৎ কাজ দিয়ে ভরে দেই। রোজাসমূহকে ত্রুটি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। তাওবা নবায়ন করি। তাওবার শর্তসমূহ পূরণ করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাউফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক, ইমাম কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ, সিলেট।