আতঙ্কের নাম ‘দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেইন’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১১:০০:০২ অপরাহ্ন
# সিলেটে পজেটিভ, ঢাকায় নেগেটিভ ৫ আফ্রিকান ক্রিকেটার!
# ২৪ ঘন্টায় ২ নারীর মৃত্যু, আক্রান্ত আরো ১৩৯
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে যুক্তরাজ্য স্ট্রেইনের পর এবার আতঙ্কের নাম দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেইন। এই আতঙ্কের মাঝে সিলেট সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ নারী ক্রিকেটারের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে সিলেটে পজিটিভ এলেও ২৪ ঘন্টার ভেতরে ঢাকায় তাদের করোনা নেগেটিভ শনাক্ত হয়। এর আগে তাদের আক্রান্তের খবরে আতঙ্ক যেন চরম শঙ্কায় রূপ নেয়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগও। দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আগের দিনের টেস্টের ফলাফল ‘ভুল’ ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে সিলেট সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ইমার্জিং দলের ক্রিকেটাররা করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। সোমবার রাতেই ওসমানী মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে তাদের করোনা শনাক্ত হয়। তারা হলেন- লি জোনস, সিনালো জাফটা, মাতসিপি মার্সিয়া লেটসালো, নবলুমকো বানেটি ও রবিন সার্লি। তাদের আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও আরটি পিসিআর ল্যাবের সুপারভাইজার ডা. শান্তনু দাস।
তবে পজিটিভ হওয়ার পরদিনই আবার ওই পাঁচজনের কোভিড পরীক্ষার ফল আসে নেগেটিভ। মঙ্গলবার ঢাকায় আবার জরুরিভিত্তিতে তাদের কোভিড পরীক্ষা করানো হলে সবারই ফল আসে নেগেটিভ। ধারণা করা হচ্ছে, সিলেটে করা পরীক্ষার ফল ছিল ‘ফলস’ পজিটিভ। পরীক্ষার ফল পাওয়ার পরই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দেশের বিমানে উঠিয়ে দেওয়া হয় তাদের। আজ থেকেই বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে লকডাউন, যেখানে বন্ধ থাকবে আকাশপথও।
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসে দক্ষিণ আফ্রিকার ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল। সিরিজের একমাত্র ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হওয়ায় ওই দিনই ঢাকা থেকে তারা সরাসরি সিলেট আসেন। আফ্রিকার নারী দল ওঠে হোটেল রোজভিউয়ে। এ হোটেল ছাড়ার আগ মুহূর্তেই দক্ষিণ আফ্রিকার ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল পেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর।
গত ২৮ মার্চ সিলেটে তাদের প্রথম কোভিড টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। এরপর ২৯-৩১ মার্চ এই তিন দিন তারা টিম হোটেলে কোয়ারেনটাইনে থাকেন। কোয়ারেন্টাইন শেষে ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার কোভিড টেস্টেও তারা সবাই নেগেটিভ হন। দুই দফা কোভিড টেস্ট শেষে ১-৩ এপ্রিল পর্যন্ত অনুশীলন শেষে ৪ এপ্রিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিক বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের কাছে ম্যাচ হারে সফরকারি প্রোটিয়া নারী ক্রিকেট দল। এরপর টানা চার ম্যাচেই হেরে যায় সফরকারীরা।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইনটি অধিকসংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত করে মারাত্মক অসুস্থ করে ফেলে-এমন অকাট্য প্রমাণ নেই। তবে এ ধরনের ভাইরাস দ্রুত ছড়ায় এবং করোনার টিকা এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের চরিত্র হচ্ছে এটি দ্রুত নিয়মিতভাবে রূপান্তর হয়। বিশ্বে করোনাভাইরাসের হাজারো মিউটেন্ট আছে। তবে গবেষকেরা দক্ষিণ আফ্রিকার এই নতুন ভ্যারিয়্যান্ট ‘৫০১.ভি২’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি এ ভাইরাসে সিলেটে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন আরো ১৩৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, দুই নারীর মাঝে বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা মোছা. মেহবাজিন দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং নগরীর শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা আঙ্গুরা বেগম সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। গতকালই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, ২৪ ঘন্টায় সিলেটের চারটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ১৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সিলেট জেলার ১০৫ জন, সুনামগঞ্জের ১০ জন ও হবিগঞ্জের ২৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
এ নিয়ে সিলেটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৫৭ জনে। এর মধ্যে শুধুমাত্র সিলেট জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯৭৭ জন। এছাড়া সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৬৪৩ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ১৭৫ জন ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ১৬২ জনের করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। সবিমিলিয়ে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৬৯ জন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ২৪৮ জন, হবিগঞ্জে ১০ জন, মৌলভীবাজারে ৫ জন।
এদিকে, ২৪ ঘন্টায় মৃত দু’জনকে নিয়ে সিলেট বিভাগে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩০৫ জনে। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২৩৬ জন, সুনামগঞ্জে ২৬ জন, হবিগঞ্জে ১৮ জন ও মৌলভীবাজারের ২৫ জন রয়েছেন।