রোজা পালনের গুরুত্ব ও ফজিলত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১১:১৫:৫৩ অপরাহ্ন
সাঈদ আল মাদানী: আজ ৩ রমজান ১৪৪২ হিজরি। রোজা পালনের ফজিলত অপরিসীম। যা সত্যিই একজন মুমিনকে সৎকাজের প্রতি আরো উদ্যমী ও উজ্জীবিত করে তুলে। কারণ রোজা এমন একটি ইবাদাত যার তুলনা হয়না। রোজা পালনকারীকে যেসব পুরষ্কার ও প্রতিদান আল্লাহ দেবেন তার অংশ বিশেষ হলো-
এক. আল্লাহ নিজে রোজার প্রতিদান দেবেন। হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি ভালো কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু রোজা শুধু আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। (সহিহ আল বুখারি: ১৯০৪)। অর্থাৎ অন্যান্য ইবাদত মানুষ দেখতে পায়। কিন্তু রোজা পালনের মধ্যে লোক দেখানোর কোন আলামত থাকে না। শুধুই আল্লাহকে খুশি করার জন্য তা করা হয়।
দুই. জান্নাত লাভ সহজ হয়ে যাবে। সহীহ ইবনু হিববান আছে সাহাবী আবু উমামা (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যার কারণে আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি বললেন, তুমি রোজা পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ইবাদাত নেই। (সুনানে নাসাঈ)।
তিন. সিয়াম পালনকারীকে বিনা হিসেবে প্রতিদান দেয়া হয়। অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান আল্লাহ তার দয়ার বদৌলতে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু রোজার প্রতিদান ও তার সাওয়াব এর চেয়েও বেহিসেবী সংখ্যা দিয়ে গুণ দিয়ে বাড়িয়ে দেয়া হবে। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। (সহিহ্ মুসলিম)।
চার. আল্লাহর জন্য রোজা পালনকারীকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রোজা ঢাল স্বরূপ। এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য) একদিন রোজা পালন করবে, এরদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে ৭০ বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তী স্থানে রাখবেন। (সহিহ্ আল বুখারী ও মুসলিম)।
পাঁচ. সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশ্কের চেয়েও উত্তম (সুগন্ধিতে পরিণত হয়)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জীবন সে সত্তার শপথ করে বলছি, সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ তা‘আলার কাছে মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায়। (সহিহ্ আল বুখারী)।
ছয়. রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
রোজা পালনকারীর জন্য দু’টো বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত রয়েছে : একটি হল ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হল তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। (সহিহ্ আল বুখারী ও মুসলিম)।
সাত. রোজা পালনকারীর পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহিহ্ আল বুখারী ও মুসলিম)।
আট. রোজা পালনকারীরা রাইয়্যান নামক মহিমান্বিত এক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন শুধু রোজা পালনকারীরা ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। তারা প্রবেশ করার পর ঐ দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ আর সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে ঢুকতে পারবেনা। (সহিহ্ আল বুখারী ও মুসলিম)।
সুত্রাং আসুন আমরা রোজার ফজিলত অনুধাবন করে পালন করার চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক: ইমাম কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ, সিলেট।