সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটা শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ৯:১১:১৫ অপরাহ্ন
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই-শাল্লা ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ প্রায় উপজেলাতেই হাইব্রিড বিআর-২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে। বিস্তীর্ণ ফসলী মাঠ জুড়ে ধানের মৌ-মৌ গন্ধে ভরে গেছে জেলার সব ক’টি হাওর। তবে গরম হাওয়ায় আংশিক ধানে চিটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। লকডাউনে শ্রমিক সংকটের কারণে কিছুটা উদ্বিগ্ন রয়েছেন কৃষকরা।
জানা যায়, চলতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় ১১টি উপজেলার ছোট বড় ১৫৪ টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫ শ হেক্টর বোরো জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ৪ হাজার হেক্টর বেশি। গত বছরের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড চাষ করা হয়েছে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা চালে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৮৭ হাজার মে. টন। টাকার অংকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই-শাল্লা, বিশ^ম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ ১১ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে-গ্রামে এখন শুরু হয়েছে আংশিক বোরো ফসল কাটা। বছরে একটি মাত্র বোরো ফসল ঘিরেই হাওরাঞ্চলের মানুষের যত স্বপ্ন। বহু প্রতীক্ষা ও ত্যাগের পর কৃষকদের বছরজুড়ে থাকা অভাব-অনটন আর জমাট বাঁধা দুঃখ-কষ্ট পেরিয়ে, এবার কিছুটা হলেও সোনাঝরা হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাউবোর সংশ্লি¬ষ্টরা জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সদরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় ধানকাটার উদ্বোধন করেছেন। তারা কৃষক ও শ্রমিককে হাওরে নেমে পাকা ধান কাটতে আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, সারা জেলায় হাইব্রীড, উফসি ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ১৫০ হেক্টর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২২ হাজার ৪৭৫ হেক্টর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ১১ হাজার ৪৯০ হেক্টর, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৭২৫ হেক্টর, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর, তাহিরপুর উপজেলায় ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর, ধর্মপাশা উপজেলায় ৩১ হাজার ৮০০ হেক্টর, ছাতক উপজেলায় ১৪ হাজার ৮০০ হেক্টর, দিরাই উপজেলায় ২৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর ও শাল্লা উপজেলায় ২২ হাজার ১০ হেক্টর, মোট ২ লাখ ২৪ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, হাওরের ধান কাটতে শ্রমিক ও কৃষককে প্রতিদিনই উৎসাহিত করছি। ধান কাটতে মাইকিং করা হচ্ছে। ত্রাণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে ধান কাটার শ্রমিকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, এবার জেলায় ২ লাখ ২৪ হাজার ৫ শ হেক্টর বোরো জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। যা গত বারের চেয়ে ৪ হাজার হেক্টর বেশি। গত বছরের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড চাষ করা হয়েছে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা চালে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার মে. টন। তাছাড়া বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আসা শুরু করেছে। কিছু এলাকায় ধান কাটার রিপার মেশিনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এ সংকট সরকারের একার পক্ষে দূর করা সম্ভব নয়। এজন্য এলাকার ধনী কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি ভালো মানের ধান কাটার মেশিন কিনতে পারেন। এতে তারা নিজেরা যেমন উপকৃত হবে পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি কৃষকরাও উপকৃত হবেন।