সিলেটে লকডাউন: ১ম দিন সর্বাত্মক, ২য় দিন ঢিলেঢালা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৫:০৯ অপরাহ্ন
# সকালে কঠোর, বিকেলে স্বাভাবিক
স্টাফ রিপোর্টার : সাত দিনের লকডাউনের প্রথম দিন ‘সর্বাত্মক’ হলেও দ্বিতীয় দিন অনেকটাই স্বাভাবিক রূপে ফিরেছে সিলেট। চলেছে রিক্সা, সিএনজি অটো রিকশা, মোটরসাইকেল সহ ছোট যান। পুলিশকে সকালে কঠোর দেখা গেলেও দুপুরের পর তাদের দেখা মিলেছে খুবই কম। তাই নগরসহ উপজেলা সদরগুলিতেও বেড়ে যায় গাড়ি ও মানুষের আনাগোনা।
গতকাল দ্বিতীয় দিন সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের আগ পর্যন্ত নগর ছিল অনেকটা ফাঁকা। এ সময় প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচলও কম। পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান এবং রাস্তায় বের হওয়া মানুষ ও যানবাহনের গতিরোধ করে চেক করে। মোটরসাইকেল, রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বের হওয়া অনেকেই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন। অহেতুক বাইরে আসায় অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়ায় অনেককে যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
কিন্তু দুপুরের পর পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। বেলা দেড়টার দিকে বন্দর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি সকালের মতো নেই। তাই বন্দর এলাকায় সবজী, ফলমুল সহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে ফুটপাতে বসেছেন হকাররা। কয়েকজন হকার জানান, বেলা দেড়টার আগে পুলিশের উপস্থিতির কারণে তারা এখানে বসতে পারেননি।
বিকেল ৪টার দিকে যান ও জনসমাগম আরো বেড়ে যায়। নগরের জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, রিকাবীবাজার এলাকায় দু-একজন পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অন্যপাশে ইফতারি বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়। এর মধ্যে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে আম্বরখানা, মিরাবাজর, শিবগঞ্জ মোড় এলাকায়। ওই এলাকার বিভিন্ন ফাস্ট ফুডের সামনে ছিল ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেননি অনেকে। ক্রেতাদের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ইফতারসামগ্রী কিনতে দেখা যায়। ভিড়ের মধ্যেও অনেকের মুখে ছিলো না মাস্ক।
দ্বিতীয় দিনের বিকেলের মতো প্রথম দিনের বিকেলের চিত্রও ছিলো একই। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসে জিলাপীর হাট। এতে দেখা যায় জিলাপি কিনতে আসা মানুষের দীর্ঘ সারি। জিলাপি কিনতে আসা অনেকেই এসময় বলেন, ‘রোজার ইফতারিতে জিলাপি অত্যন্ত পছন্দের খাবার। এ জন্য জিলাপি কিনতে এসেছি। ভিড়ের মধ্যে কিছুটা কষ্ট হলেও জিলাপি নিয়েই ঘরে ফিরব।’ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানার ব্যাপারে কেউ কেউ বলেন, ‘ঘরে গিয়ে কাপড়-চোপড় বাইরে রেখে গোসল করে নেব।’
তবে সর্বাত্মক লকডাউন কিছুটা পূর্ণতা পেয়েছে কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কুমারগাও বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও বিমানবন্দরে। এসব স্থানগুলোতে নেই স্বাভাবিক দিনের চিত্র। নেই মানুষের আনাগোনা। নেই কোন ব্যস্ততা।
পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, সিলেটে মেট্রোপলিটন এলাকায় ২০ টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এরমাঝে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে ৬টি এবং নগরীর ভেতরে ১৪টি চেকপোস্ট। ১৪টি মোবাইল পেট্রোলও চালু রয়েছে। এসব চেকপোস্ট থেকে ২দিনে ৯৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও ৮৯টি গাড়ি আটক করা হয়েছে। তবুও কিভাবে চেকপোস্ট ভেঙে গাড়ি ঢুকে এসব প্রশ্নের কোন উত্তর মিলেনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, সিলেট সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য পুলিশ সর্তকবস্থায় রয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের ছয়টি থানা এলাকা পুলিশের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। সেই সাথে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। কেউ নির্দেশনা না মানলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এদিকে, বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে উপজেলা সদর ও গ্রাম্য বাজারগুলোতে সর্বাত্মক লকডাউনের প্রভাব খুবই কম। এসব বাজারগুলোতে যেমন মানুষের উপস্থিতি আছে, তেমনি কেনাকাটার ব্যস্ততাও প্রতিদিনের মতো। উপজেলা সদরে প্রশাসনের সতর্কতা ছিলো। জরিমানাও হয়েছে অনেক। তবে অভিযান না থাকায় গ্রামের বাজারগুলোর চিত্র একেবারেই পাল্টায়নি। অনেকের মতে, লকডাউন কেবলই শহরকেন্দ্রীক।