গাড়ির চাকার সাথে বাঁধা ওদের জীবন-জীবিকা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ এপ্রিল ২০২১, ১০:২১:৪২ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব : গাড়ির চাকার সঙ্গে জীবনজীবিকা বাঁধা চল্লিশোর্ধ্ব পরিবহনশ্রমিক মানিক মিয়ার। জীবনের দেড় দশক কেটে গেছে গাড়িতেই। গাড়ির চাকা ঘুরলে তার জীবিকা সচল থাকে, চাকা থেমে গেলে থেমে যায় তার জীবিকার চাকাও।
শুধু মানিক নয়, গাড়ির চাকা না ঘোরায় তার মতো অনেক পরিবহন শ্রমিকের জীবনের চাকাও যেন থেমে গেছে। বাড়ছে দুর্দশা, চাল কেনার টাকা না থাকায় চুলাও জ্বলে না বেশিরভাগ সময়। করোনার বেড়ে যাওয়া সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে বাস চলাচল বন্ধ। গাড়ি চাকার সঙ্গে ৪ দিন ধরে থেমে গেছে চালক মানিকের জীবিকাও। প্রতিদিনের রোজগারেই তার সংসার চলত। আর এখন দিন কাটছে প্রচ- অর্থকষ্টে।
বুধবার সিলেট নগরীর কদমতলী টার্মিনালে বাস চালক মানিক মিয়ার সাথে প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি সিলেট-জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার-বড়লেখা সড়কে বাস চালান। তার ৩ সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন চাল, ডাল, নুন, তেল, তরিতরকারি কিনতে গড়ে ৩০০ টাকা খরচ হয়। এর বাইরে আছে গ্যাস-বিদ্যুতের বিল।
মানিক মিয়া বলেন, গত বছরও করোনার কারণে এ সময়টাতে একটানা প্রায় ৪ সাড়ে চার মাস গাড়ি বন্ধ ছিলো। তাতে সংসার চালাতে হয় ধারদেনা করে। এখনো ধারের টাকা শোধ হয়নি। এর মধ্যে বাকি পড়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের বিল। গত ৫ এপ্রিল থেকে আবারও থেমে আছে জীবিকার চাকা।
তিনি আরো বলেন, গাড়ি চললে দিন শেষে হাজার ১২শ’ টাকা পারিশ্রমিক পেতাম। এখন বাড়িতে বসে অলস সময় কাটছে। সঙ্গে নানা দুশ্চিন্তা। কীভাবে সংসার চলবে, সন্তানের পড়াশোনার খরচ চলবে? সামনে রোজা ও ঈদ আসছে। হাতে হাজার দু-এক টাকা জমানো ছিলো, এক সপ্তাহ ধরে সেই টাকায় চলছি। যদি আরো কিছুদিন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে, তাহলে মানুষের কাছে হাত পাততে হবে। কিন্তু হাত পেতে কতো দিন চলতে পারব?
গাড়িচালক মানিক আক্ষেপ করে বলেন, সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। দোকানপাটও খুলে দিয়েছে সরকার। বড় শহরেও গাড়িঘোড়া চলছে। যতো দোষ শুধু যাত্রীবাহী গাড়ির। অথচ রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার সবকিছুই চলছে। মানিকের প্রশ্ন, করোনা কী বাস থেকে ছড়ায়?
লকডাউনের প্রথমদিন বুধবার সরেজমিন টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সারি-সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। চালক-হেলপাররা আশপাশে ঘুরাঘুরি করছেন। কেউবা টার্মিনালেই পার্কিং করে রাখা বাসের ভেতর বসে গল্প করে অলস সময় পার করছেন।
হেলপার শরীফুল বলেন, ড্রাইভাররা তো কোনমতে চলতে পারতাছে। আর আমগোর বাড়িত খাওন নাই। এইলেইগ্যা বাড়িত চুলাও জ্বলতাছে না। এমনে চলতে থাকলে না খাইয়্যা মরতো অইবো। পরিবহনশ্রমিক নেতারা বলেন, গত বছর সরকার গরীব মানুষ থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ী সবাইকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। শুনেছি, লাখ কোটি টাকার বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সরকার। অথচ কারও কাছ থেকে পরিবহনশ্রমিকরা প্রণোদনার একটি টাকাও পাননি। অথচ অন্য সবার মতো পরিবহনশ্রমিকদেরও জীবনের কোনো খরচই থেমে নেই।