ভ্যাকসিন না এলে মে মাসেই চ্যালেঞ্জের মুখে দেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ৯:০১:৫৯ অপরাহ্ন
জালালাবাদ রিপোর্ট: দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে। এদিকে ভ্যাকসিন সরবরাহের অনিশ্চয়তায় প্রয়োগের কার্যক্রম নিশ্চিত ঝুঁকির দিকেই এগুচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, যে ভ্যাকসিন আছে, এপ্রিল মাসে কোনো সমস্যা হবে না। তবে মে মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন না এলে চলমান কার্যক্রম নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তবে, সেরাম ছাড়াও রাশিয়া এবং চীনসহ বিকল্প সব জায়গা থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুরু থেকেই বিকল্প না রেখে একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গত ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসে বাংলাদেশে। ২১ জানুয়ারি উপহার হিসেবে আরও ২০ লাখ ভ্যাকসিন পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ লাখ আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ২০ লাখ। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের হাতে এসেছিল এক কোটি দুই লাখ ডোজ। মার্চে ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চালান আসেনি। কবে নাগাদ চালান আসতে পারে, তা কেউ বলতে পারছে না।
কিন্তু প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন যে সংখ্যক মানুষ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রায় দশ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ঘাটতি রয়েছে, যা সরকারি হিসাবেই পাওয়া যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, আমাদের কাছে যে ভ্যাকসিন আছে, সেটায় এ মাস চলে যাবে আশা করা যায়। তবে পরবর্তী মাসে যদি আমরা কোথাও থেকেই ভ্যাকসিন না পাই, তখনই সংকটে পড়ে যেতে হবে। যা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, ভারতের এ সমস্যাটার জন্য আমাদের সংকট দেখা দিয়েছে। ওদের তো অনেক বেশি আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে, ওদের মৃত্যুও অনেক বেশি। কিন্তু এটা তো কেনা ভ্যাকসিন, আমাদের অধিকারটা তো বেশি।
অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, টিকার বিষয়ে চীন বা রাশিয়া কারো থেকেই এখনও কোনো নিশ্চয়তা আসেনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি দেখছেন, বিভিন্ন দেশে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ভারত, রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটা মেলানো যায় কি না। কিন্তু এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো ফলাফল আমরা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিস্ট্রিবিউট করা শুরু করেছে ইতোমধ্যে। আমরাও সেই তালিকায় আছি। ওটা পেয়ে গেলে আমাদের জন্য বড় একটা সুবিধা হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম বলেন, ভ্যাকসিনের ঘাটতি থাকছেই। হিসাবে তাই বলে। এখন সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তাগাদা দিয়েছি। এর মধ্যে আমরা আমাদের অধিদফতর এবং মন্ত্রণালয় দুই দুই বার তাকে (সেরামকে) চিঠিও দিয়েছি। তারাও প্রত্যেকবার বলছে যে এটা অসুবিধ হবে না। সেরামের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়া এবং চীন থেকে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাশিয়া এবং চীন থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে রাশিয়া এবং চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে যে তারা দিতে চায়। ইতোমধ্যে আমাদের দুই-তিনটা বৈঠকও হয়েছে। তবে মুশকিল হচ্ছে, কেউ না করছে না। ভ্যাকসিন দেবে না, একথা কেউ বলছে না। কিন্তু কবে পাওয়া যাবে, সেই নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।
সেরামের স্থগিতাদেশে কোভ্যাক্সেও সংকট দেখা দেবে?
বাংলাদেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহের কথা রয়েছে কোভ্যাক্সের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ হচ্ছে কোভ্যাক্স। যার আওতায় বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম ধাপে বাংলাদেশকে যে এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে চেয়েছিল, তাও অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
মহাপরিচালক অধ্যাপক আলম জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ভারতের সেরামের কাছ থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেরাম এ মুহূর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও ভ্যাকসিন দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
সেরাম যদি কোভ্যাক্সকেও ভ্যাকসিন না দেয়, তাহলে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন পেতে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, সেরাম কোভ্যাক্সকে ভ্যাকসিন না দিলেও আমাদের ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ কোভ্যাক্সের সঙ্গে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি আছে। ফাইজার, জনসনের ভ্যাকসিন কোভ্যাক্স পাচ্ছে, সুতরাং সেরাম ভ্যাকসিন না দিলেও বিকল্প ভ্যাকসিন তারা দিতে পারবে। কেননা ওদের কাছে শুধু একটা পোলের ভ্যাকসিন নয়। আপাতত এটাই আমাদের আশা। আর বাকিটা তো বিভিন্ন দেশের সরকার মহলে যোগাযোগ চলছে। কিন্তু তারা যদি এখন অনেক বেশি দরদাম চায়, তাহলে তো এখানে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও দেখতে হবে। তবে বিভিন্ন দিকেই যেহেতু যোগাযোগ চলছে, একটা সিদ্ধান্তে চলে আসা যাবে।
ভ্যাকসিনের সংকট থাকলেও প্রথম ডোজ এখনও চলছে। এটা বন্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের উদ্দেশ্য হচ্ছে যতো পার্সেন্টের জনগণকে কাভার দিতে পারেন, কিন্তু এখন যদি প্রথম ডোজ বন্ধ করে দ্বিতীয় ডোজই দিতে থাকেন, তাহলে তো আপনি ৩ পার্সেন্টেই রয়ে গেলেন আরকি। কিন্তু এ তিন ভাগ দিয়ে তো কিছুই হবে না। না আপনি সংক্রমণ কমাতে পারবেন, না পারবেন হাসপাতালে মৃত্যু কমাতে। এ জন্য যে ভ্যাকসিন থাকুক না কেন, যতবেশি পরিমাণে কাভারেজ দেওয়া যায়, সেটাই ভালো।