আহলান সাহলান মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১১:২৩:৫৫ অপরাহ্ন
সাঈদ আল মাদানী: আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যত নেয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো একটি নেয়ামত হলো আল কুরআন। আর রোজা পালনের সাথে আল কুরআনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা রোজা ফরজের পাশাপাশি এ মাসে কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী’। (সূরা বাকারা: ১৮৪)। আল্লাহ তায়ালা রোজার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার’। (সূরা আল-বাক্বারা : ১৮৩)। তাকওয়া বৈশিষ্ট অর্জন করা ছাড়া কুরআন থেকে হেদায়াত অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা সে কথাটি সূরা বাকারার শুরুতে বলেছেন, ‘এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। এটি হিদায়াত মুত্তাকীদের জন্য’। (সূরা আল বাকারা-২)।
সুতরাং আমরা রমজান মাসের রোজা পালনের মধ্যে দিয়ে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করে আল্লাহর কুরআন থেকে হেদায়েত নিতে পারি। বিশ্ব নবী রমজান মাসেই জিবরাঈল (আ.) নবী (সা.) এর সাথে কুরআনুল কারিম মুদারাসা করতেন। আবু হুরাইরা (রা.) আনহু থেকে বলেন, ‘জিবরাঈল (আ.) প্রতি বৎসর রাসূল (সা.) কাছে কুরআন উপস্থাপন করতেন। অত:পর যে বৎসর তিনি ইন্তেকাল করেছেন সে বৎসর দুবার কুরআন উপস্থাপন করেছেন’। (সহিহ্ আল বুখারী)। অতএব এই কুরআন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির প্রতি অনুগ্রহস্বরূপ এবং সত্যপথের দিশা হিসেবে কুরআন দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি! তোমাদের নিকট এসেছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে উপদেশ। যা আরোগ্য অন্তরের ব্যাধির জন্য এবং পথনির্দেশ ও অনুগ্রহ মুমিনের জন্য।’ (সূরা ইউনুস- ৫৭)। কুরআনের কল্যাণ সাধারণভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে কল্যাণ অর্জন করতে হলে তাকে নূন্যতম কিছু অধিকার রয়েছে যা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আল কুরআনের সেই অধিকার গুলো হলো-
এক. আল কুরআনের প্রতি ঈমান আনা। ঈমান আনার ক্ষেত্রে কিছু অংশে ঈমান আর কিছু অংশ অস্বীকার করা যাবেনা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর, সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে! আর কিয়ামাতের দিন তাদের কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন’-[সূরা আল-বাকারাহ : ৮৫]।
দুই. সহিহ্ শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করা। কুরআন তিলাওয়াত করা কুরআনের একটি হক। কুরআন মাজীদে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এভাবে, ‘তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে, তা থেকে তিলাওয়াত কর’ -[সূরাহ আনকাবুত : ৪৫]। আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কুরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়’ -[সহীহ বুখারী : ৭৫২৭]।
তিন. মুখস্ত’ করা। কুরআন হিফজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআন হিফজের দায়িত্ব নিয়েছেন। এ হিফজেরই এক প্রকার হচ্ছে, বান্দাদের কুরআন হিফজ করানো। যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কুরআনকে সংরক্ষণ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাজিল করেছি, আর আমিই তার হিফাজতকারী’ -[সূরা আল-হিজর : ০৯]।
চার. কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর (চিন্তা, গবেষণা) বুঝে বুঝে পড়ার চেষ্টা করা। তিলাওয়াত ও শ্রবণ উভয় ক্ষেত্রেই কুরআনের অর্থ বুঝলেই শুধু পরিপূর্ণ সাওয়াবের আশা করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বারবার বলেছেন যে, কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য হলো যেন মানুষেরা তা বুঝে, চিন্তা করে এবং উপদেশ গ্রহণ করে। এক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘এক বরকতময় কল্যাণময়গ্রন্থ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যেন তারা এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা সাদ- ২৯ আয়াত)।
পাঁচ. কুরআন অনুযায়ী আমল করা। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাজিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’ -[সূরা আল-আরাফ : ৩]।
ছয়. কুরআন প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা। কুরআনের প্রচার, প্রসার ও তা প্রতিষ্ঠার কাজ করা কুরআনের একটি হক। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও’। [সূরা আল-মায়িদাহ: ৬৭]। অতএব, নিজ ব্যবস্থাপনায় কুরআন শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা, হিফজ প্রতিযোগিতা, কুরআন বুঝার আসর, তাফসীর প্রতিযোগিতা, মাকতাব চালু করা, কুরআনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত সংস্থাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা এ কাজের অন্তর্ভুক্ত। সর্বোপরি কুরআনের বিধান সমাজে প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে। আল্লাহ তায়াল আমাদের কুরআনের অধিকার বাস্তবায়ন করার তাউফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ইমাম, কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ, সিলেট।