ধারাবাহিক বৈঠকে বিএনপি: সব দলকে নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলনের পক্ষে মত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ৯:১৮:৫০ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ডান-বামসহ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনের পক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্যরা। রোববার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ধারাবাহিক ভার্চুয়াল বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে এ মতামত দেন তারা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা জানান, দলের হাইকমান্ড থেকে সবাইকে দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় হতে বলেছেন। পাশাপাশি যেসব মতামত এ বৈঠকে উঠে এসেছে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো ১৬ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিক ভার্চুয়ালি বৈঠক শুরু করে বিএনপি। চেয়ারপারসনের বৈঠকের পর ভাইস চেয়ারম্যান ও সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তারেক রহমান।
বিএনপি নেতারা বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে দলকে গোছাতে হবে। এ জন্য দ্রুত পুনর্গঠন কাজ শেষ করতে হবে। এরপর, সরকারের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এ দায়িত্ব বিএনপিকেই নিতে হবে। দেশের মানুষ এখনো বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে। সরকারের দমন-পীড়নের পরও সাধারণ মানুষের সমর্থন এখনো বিএনপির প্রতি।
ভার্চুয়ালি এ ধারাবাহিক বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান অংশ নেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় বৈঠকে ছিলেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন (অব.) সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রশিদ সরকার, অধ্যাপক তাসমেরী এস ইসলাম, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালি, তাহশিনা রুশদির লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী, ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার প্রমুখ।
বেলা সাড়ে ৩টা থেকে ৩ ঘণ্টার এ বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মহামারি করোনা পরিস্থিতি, সরকারের দমন-পীড়ন, লুটপাট বিষয়ে নেতারা বক্তব্য দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে লকডাউন চলছে। নি¤œ আয়ের মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করছে সেদিকে কারো কোনো খেয়াল নেই। সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো সাহায্য দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসাবে বিএনপিকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আরেকজন উপদেষ্টা বলেন, দেশে লকডাউনের নামে ক্র্যাকডাউন চলছে।
বিরোধী নেতাকর্মীদের একের পর এক গ্রেফতার করা হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। কারণ, হেফাজতের কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক না থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
এর অর্থ হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বকে সরকার বোঝাতে যাচ্ছে হেফাজত হচ্ছে ইসলামি মৌলবাদী সংগঠন, এর মদদদাতা বিএনপি। দেশে এখন হেফাজত দমনের নামে রমজানের এ মাসে ওলামাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিএনপিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
বৈঠকে ইলিয়াস আলী ইস্যুতে মির্জা আব্বাসের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন কয়েকজন নেতা। কেউ কেউ প্রশ্ন করেন এত বছর পরে কেন এমন বক্তব্য রাখলেন? এ থেকে সরকার ফায়দা হাসিলের সুযোগ খুঁজবে। কয়েকজন নেতা সরকারের লুটপাট আর অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলের হাইকমান্ড থেকে ওইসব নেতাদের সরকারের লুটপাটের বিষয়ে ডকুমেন্টারি তৈরির বিষয়ে কথা বলেন।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, বৈঠকে বর্তমানে করোনা মহামারিতে কিভাবে আরও জনসম্পৃক্ত কাজ বাড়ানো যায়, কিভাবে করোনা আক্রান্ত কিংবা দুস্থদের পাশে আরও বেশি করে থাকা যায় সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া লকডাউনের মধ্যে সরকারের দমন-পীড়ন এবং এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সরকারের লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার, আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।