বাঁশের ব্যারিকেড মূলপথে, যান চলাচল ফাঁড়িপথে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১১:৩০:১১ অপরাহ্ন
পুলিশের অভিনব কৌশলও ম্লান
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে লকডাউনের শুরু থেকেই নির্দেশনা মেনে বন্ধ মার্কেট, বিপনী-বিতান। বন্ধ রেল স্টেশন, বিমান ও দুর পাল্লার বাস চলাচল। কিন্তু এর উল্টো চিত্র নগরীর ভেতরের সড়কগুলোতে। রিক্সা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের দখলে ছিলো সবকটি রাস্তা। তাই ৬ষ্ট দিনে অভিনব কৌশলে নামে সিলেটের পুলিশ। নগরের অন্তত ২০টি পয়েন্টে সড়কে বাঁশ ফেলে লকডাউন বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তারা। কিন্তু এ কৌশলও ভেস্তে যায়। চালকরা মূলপথের পরিবর্তে তখন ফাঁড়িপথকেই বেছে নেয়।
বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করা সড়কগুলো হলো, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, মদিনামার্কেট, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, অতিরবাড়ি, শ্রীরামপুর বাইপাস, পারাইর চক, বটেশ্বর, এয়ারপোর্ট রোড, রিকাবীবাজার, লামাবাজার, জিন্দাবাজার ও কাজীর বাজার সেতুর দক্ষিণ পার্শ্ব।
সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সড়কগুলোতে একদিকে বাঁশ দিয়ে আটকানো সড়ক। যাতে একপ্রান্তের গাড়ি অন্যপ্রান্তে যেতে না পারে। তবে এক পাশে একটু ফাকা রাখা হয়েছে, সেখান দিয়ে জরুরী সেবার গাড়িগুলোকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এসকল চেকপোস্টে অননুমোদিত প্রাইভেটকার, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ পায়ে হাঁটা মানুষদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কেউই প্রবেশ করতে পারছেন না।
নগরের কেন্দ্রবিন্দু বন্দরবাজার-সিটিপয়েন্ট-কোর্ট পয়েন্টে দেখা যায়, তিনমুখী সড়কে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এ সময় পুলিশ সদস্যরা শহরগামী গাড়ি ও যাত্রীদের মুভমেন্ট পাস দেখে দেখে যাতায়াতের সুযোগ করে দেন।
একইচিত্র লামাবাজার, ক্বীনবিজ্র, হুমায়ুন চত্বর, রোজভিউ-উপশহর পয়েন্ট, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, চৌহাট্টা, আম্বরখানাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে লক্ষ্য করা যায়।
তবে মূল সড়ক বন্ধ হলেও ফাঁড়ি পথে মানুষের যাতায়াত ছিলো অবাধে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়কে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হলেও বিকল্প পথে ছুটছেন মানুষ। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফাঁড়ি পথে জনস্রোত। রিক্সা ও অটোরিকশাগুলো মূল সড়কের পরিবর্তে ফাঁড়িপথকেই বেছে নেয়।
মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, যেহেতু গাড়ি চলাচল বেড়ে গেছে তাই শতভাগ লকডাউন কার্যকরে তাদের এমন উদ্যোগ।
দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সরকার ঘোষিত লকডাউনের প্রথমদিন থেকেই ট্রাফিক বিভাগ নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছে। তখন লোকজন ও গাড়ি চলাচল সীমিত ছিল। তবে গতকাল (রোববার) থেকে নগরে লকডাউন মানার প্রবণতা কমেছে। তাই, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অপ্রয়োজনে বের হওয়া সব গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
লকডাউনের কারণে নগরের শপিংমল, বিপনীবিতান যথারীতি বন্ধ রয়েছে। নিত্যপণ্যের দোকানপাট বিধিনিষেধ মেনে দিনের বেলা খোলা রাখা হচ্ছে। তবে সন্ধ্যার দিকে বাজারে ইফতার সামগ্রী কিনতে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ে। উপচেপড়া ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি একেবারেই।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ভিড়ের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সুযোগ রয়েছে। এটি পুলিশ প্রশাসনের নজরে আনা উচিত। প্রয়োজনে জিলাপি-পিয়াজুর দোকান বন্ধ করে দেওয়া দরকার। অন্যথায় লকডাউনের কার্যকর উদ্যোগ ভেস্তে যাবে।
এদিকে, লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে যথারীতি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল গতকাল আরো বেড়েছে। রিকশা ও মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে গন্তব্যে যাওয়ার মাত্রাও বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার সকাল থেকে পুলিশ প্রশাসন কঠোরতা আরোপ করে। এর আগে গত কয়েকদিনে অন্তত শতাধিত যানবাহন আটক ও চালকের বিরুদ্ধে মামলা করে ট্রাফিক বিভাগ।
সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ‘পুলিশ সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে কাজ করছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বুধবার থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের শুরু থেকেই দেখা গেছে অনেকেই বিভিন্ন অজুহাতে বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। তাই লকডাউন কার্যকর করতে সিলেটের সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁশের বেড়া দেয়া হয়েছে। এতে কেউ চাইলেই হুট করে গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন না।’
মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, লকডাউন আরো কঠোর করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী আরো কয়েকদিন বাঁশের ব্যারিকেড থাকবে বলে জানান তিনি।