বাহুবলে খাল খনন প্রকল্পে অনিয়ম
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০২১, ৮:১২:৪৮ অপরাহ্ন
সিদ্দিকুর রহমান মাসুম, হবিগঞ্জ : বাহুবলে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার খাল খনন প্রকল্পে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দরপত্রের শর্ত মানছে না সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনমনে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।
জানা যায়, বাহুবল উপজেলার গুরুত্বপূূর্ণ একটি খালের নাম ‘যোজনাল’। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি ‘দুধনাল’ হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে, এক সময় এ খাল দিয়ে বড়-বড় মালবাহী নৌকা চলাচল করত। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল এটি। কালের বিবর্তনে খালটি দীর্ঘদিন আগে থেকেই প্রায় মৃত অবস্থায় রয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় ভাবে খাল পূনঃখনন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ‘যোজনাল’ খাল খননের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। দরপত্রের মাধ্যমে কাজের দায়িত্ব পায় দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এ প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবার কথা। মোট ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ কিলোমিটার কাজ করবে ‘মেসার্স অসিম সিং’ এবং অবশিষ্ট ৫ কিলোমিটার কাজ করবে ‘মেসার্স আবুল কালাম আজাদ।’ প্রকল্পের সীমানা হল, করাঙ্গী রাবার ড্যাম থেকে শুরু হয়ে মিরপুর বাজারের উজানে দুই কিলোমিটার। মিরপুর বাজার অংশের কাজ করবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজে চরম অনিয়ম করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খননের গভীরতা ও প্রস্থে হচ্ছে দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন। কোথাও গভীরতা হচ্ছে বেশি, কোথাও কম। কোথাও প্রস্থ হচ্ছে সরু, আবার কোথাও প্রশস্ত। ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা খালের মধ্যে চলে যাওয়ার অভিযোগও করছেন কেউ কেউ।
অন্যদিকে, অনেক প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা কৌশলে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় জনমনে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা। ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্মারক লিপিও দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক দপ্তরে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘গতকালও আমি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছি। এতে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। কাজ শেষ হবার পর ‘লেভেল মেশিন’ দিয়ে মাপা হবে। যতটুকু কাজ হবে ততটুকুরই বিল পাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। বাজার, কবরস্থান, মন্দির কিংবা শ্মাশানের মতো জায়গা উদ্ধার করা কঠিন। তবে অবৈধ স্থাপনার মালিকদের মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরানো না হলে নোটিশ করা হবে এবং প্রয়োজনে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এলাকার মানুষের অনেক সুবিধা হবে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হবে। এতে এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে। পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখবে। এতে কৃষকের সেচের ব্যবস্থা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের প্রস্থে স্থান ভেদে ভিন্নতা আছে। কোথাও ৩ মিটার, কোথাও ৫, ৬ এবং কোথাও ৭ মিটার প্রস্থ হবে। মিরপুর বাজার থেকে উজানের দিকে ৩ মিটার এবং মিরপুর বাজার থেকে ভাটির দিকে স্থান ভেদে ৫ থেকে ৭ মিটার পর্যন্ত প্রস্থ হবে। গভীরতা হবে গড়ে ২ মিটার। মূলত জায়গা পেলেই খাল বড় হবে।’