সুনামগঞ্জে দুর্দিনে নিম্নআয়ের মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০২১, ৮:১৪:৪৬ অপরাহ্ন
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ: বৈশ্বিক করোনার থাবায় কাবু হয়েছে সুনামগঞ্জের নি¤œ আয়ের লোকজন। তারা এখন চরম দুর্দিনে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান অনেক শ্রমজীবী। কোন কাজ না থাকায় ও ঘর থেকে বের হতে না পারায় কোন রকম দিনাতিপাত করছেন।
জেলার পৌর শহরের চা বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘এত অসুবিধায় আমি কখনো পড়িনি। সারা দেশে লকডাউন দেওয়ার প্রথম কিছুদিন দোকান বন্ধ ছিল। কিছু টাকা জমানো ছিলো, সে সময় খরচ হয়ে গেছে। এখন আবার কিছু সময়ের জন্য দোকান খোলা থাকলেও কোন কাস্টমার নেই। তিনি বলেন, চা-পান বিক্রি করে আমার সংসার চলে। এরকম আর কতদিন চলবে, আমার মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আয় বন্ধ থাকলে সংসার চলবে কি করে।’
জামালগঞ্জের রিকশা চালক উসমান মিয়া বলেন, ‘আমার সংসারে পাঁচজন লোক। রিকশা চালিয়ে ও আমার বৌ মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে দুই জনে সংসার চালাইতাম। লকডাউনের কারণে আয় রোজগার বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্দিনে দিন যাচ্ছে। গত বছর সরকারে যে অনুদান দিছিল আমরাতো পাইনাই, দলীয় নেতারা মুখ দেইখ্যা নিজেদের লোকজনরে দিছে।’
করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছরের ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখনও বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ওই সময় দেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছিল। নিম্ন আয়ের মানুষ যখন সেই ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সামাল দিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এরপরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ এপ্রিল থেকে সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে জরুরি পণ্য ও সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত কার্যক্রমের বাইরে সবকিছু বন্ধ রাখা হয়েছে। এই লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এতে দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের টিকে থাকার সংগ্রাম আরও কঠিন হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছেন নতুন করে।
রিকশাচালক, পরিবহনকর্মী, হকার, দিনমজুর, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কামার, জেলে, দর্জি, বিভিন্ন ধরনের মিস্ত্রি, নির্মাণ শ্রমিকসহ দৈনন্দিন আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষ কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। কাজ থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে ভ্যানচালক, ঠেলাগাড়িচালক, রংমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, তালা-চাবির মিস্ত্রি, সাইকেল-ভ্যান, রিকশা ও মোটর গ্যারেজের কর্মীদেরও। মোবাইল রিচার্জের ব্যবসায়ী, ফুল বিক্রেতা, দোকানের কর্মচারী, ফুটপাতের ব্যবসায়ীরাও আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মধ্যবিত্ত পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘আমরাতো কোন দিন সরকারি কোন সাহায্য পাইনি। লাইনেও যেতে পারি নাই। কোন কাজ নেই কি ভাবে রমজানে দিন কাটছে শুধু আমাদের আল্লাহ্ ভালো জানেন।’ ওয়ার্কশপ কর্মচারী বীরেন্দ্র বলেন, ‘লকডাউনে কোন কাম কাজ নাই। পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।
টেইলার্স জাকির হোসেন বলেন, ‘টেইলারী করে কোন রকম সংসার চলতো। গত পহেলা বৈশাখে কোন কাজ পেলাম না। সামনে ঈদ আসছে মানুষ খাবে না কাপড় সেলাই করাবে। আয় রোজগার না থাকলে পরিবার চালাবো কি করে।