আহলান সাহলান মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২১, ১১:৪৭:৪৭ অপরাহ্ন
সাঈদ আল মাদানী: আল্লাহ তায়ালা কিছু দিন-রাত, মাস ও সময়কে ফজিলতের বা মর্যাদাপূর্ণ করেছেন। তার মধ্যে রমজান মাস হলো অন্যতম। কেনইবা হবেনা? যে মাসের আগমনে গোটা বিশ^ বাসীর হেদায়েতের সুচনা হয়েছে। বিশ^বাসী হয়েছে আলোকিত। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে পেয়েছে আলোর দিশা। যার আগমনে বিশে^র স্বাভাবিক অবস্থার হয়েছে পরিবর্তন। আল্লাহ তায়ালা এই মাসকে কুরআনের মাস আখ্যায়িত করে তাকে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন। [ সূরা বাকারা : ১৮৪ ]। অর্থাৎ, এই মাসটি অন্যান্য মাসের মতই সাধারণ একটি মাস ছিলো। আল্লাহ তায়ালা আল কুরআন অবতীর্ণ করে আল কুরআনের মাস আখ্যায়িত করে সম্মানিত করেছেন। এই মাসেই বিশ^বাসীর হেদায়েতের সুচনা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। [ সূরা বাকারা : ১৮৪ ]। এই মাসেই রয়েছে গোটা বিশ^বাসীর জন্য লাইলাতুল কদর বা ভাগ্যরজনী একটি রজনী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। [সূরা আল-কদর : ৩-৫]।
এখানে শিক্ষা হলো যে, আমরা যদি লাইলাতুল ক্বদরের মত কোরআনকে ধারণ করতে পারি, আমি হব ইনসানূল ক্বদর, আমি হব উম্মাতুল ক্বদর। যে মাসে আল কুরআন নাজিল হওয়ার কারণে হয়েছে সম্মানিত। আমারও হবো পৃথিবীর সবচাইতে সম্মানিত জাতি। এই মাসের আগমনে বিশে^র স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয়। যা অন্য কোন সময় হয়না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদের। [ সহিহ্ মুসলিম ]। রমজান মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তির ও দোআ কবুলের মাস। রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। [ সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ]। তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে। রমজান মাস পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতপর বললেন, আমীন, আমীন আমীন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, এটা আপনি কী করলেন? তিনি বললেন, জিবরীল আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তির নাক ধূলিধুসরিত হোক যার সামনে রমযান প্রবেশ করলো অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না। আমি শুনে বললাম, আমীন (আল্লাহ কবূল করুন)। (সহীহ ইবন হিব্বান)। রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। [ তিরমিজি ]। রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। (সহিহ্ আল বুখারী)। অনেক উলামায়েকেরাম বলেছেন, এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদানও কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।’ আমাদের কর্তব্য হলো, আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করার আপ্রান চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক : ইমাম কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ, সিলেট।