মজুত চলবে আর ১৫ দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০২১, ১০:০২:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত দুটোই উর্ধ্বমূখী। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এমন কঠিন সময়ে করোনা ভ্যাকসিন সংকটে পড়তে যাচ্ছে সিলেট বিভাগ। শেষ হতে চলেছে ভ্যাকসিনের মজুত। তবুও দ্বিতীয় ডোজের পাশাপাশি প্রতিদিনই অনেকেই নিচ্ছেন প্রথম ডোজও। তবে এভাবে চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে সিলেটের ভ্যাকসিন। প্রথম ডোজ যেমনই হোক, দ্বিতীয় ডোজ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে লক্ষাধিক মানুষকে। যদিও প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবুও ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে রয়েছে ধুয়াশা। কারণ ভারত ভ্যাকসিন রফতানী বন্ধ করায় নতুন ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত রয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে প্রথম চালানে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আসে। এরপর দ্বিতীয় চালানে আসে আরো ১ লাখ ৯২ হাজার ভ্যাকসিন। বর্তমানে বিভাগে মজুত আছে ৭০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ১ম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৭ জন। ২য় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৯৩৪ জন। বর্তমানে মজুত আছে ৭০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন। সব মিলিয়ে সিলেট বিভাগে ভ্যাকসিন নিয়েছেন মোট ৪ লাখ ৯ হাজার ৫৩১ জন। সিলেট বিভাগে ১ম চালানে আসা ৪ লাখ ৪৪ হাজার ভ্যাকসিনের মধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৯ ডোজ ভ্যাকসিন ফেরত পাঠানো হয়। ফলে সংকট আরো ঘনীভুত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় গত ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে সিলেটেও চালু হয় করোনার ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচী ‘গণটিকা’ কার্যক্রম। সেদিন থেকে সিলেট বিভাগে ১ম ডোজের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৮১৮ জন। এদের মধ্যে ১ম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৭ জন ও ২য় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৯৩৪ জন। এখনো ১ম ডোজ নিতেই বাকী আছেন ৭৪ হাজার ২১১ জন। এর মাঝে ২য় ডোজের বাকী রয়েছেন ৮৭ হাজার ৬৬৩ জন। আর সিলেট বিভাগে মজুত আছে ৭০ হাজার ডোজ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের পাঁচ নভেম্বর যে চুক্তি হয়েছিল তাতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন রফতানি করবে এবং সে অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। এ পর্যন্ত ভারত থেকে ভ্যাকসিন এসেছে মোট ১ কেটি ২ লাখ ডোজ। এর মধ্যে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে গত ২১ জানুয়ারি প্রথমে আসে ২০ লাখ ডোজ। সরকারের অর্থে কেনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালানে ২৫ জানুয়ারি আসে ৫০ লাখ ডোজ, ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ আসে আরও ২০ লাখ ডোজ এবং সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ আসে ১২ লাখ ডোজ। অর্থাৎ, ভারত থেকে কেনা ও উপহার মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট ভ্যাকসিন এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। দেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ। গত ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য চুক্তির ৩০ লাখ এবং মার্চ মাসের ৫০ লাখ অর্থাৎ চুক্তির ৮০ লাখ টিকা এখনও দেশে আসেনি। এপ্রিল মাসে টিকা আসার সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত নেই।
স্বাস্থ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে এখন মজুত টিকা রয়েছে ৪৯ লাখের মতো। আর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি রয়েছে প্রায় ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪৮১ ডোজ। প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা যদি বর্তমান হারে চলতে থাকে, তাহলে মজুত টিকা ফুরিয়ে যাবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা: মোহাম্মদ নুরে আলম শামীম বলেন, বৃহস্পতিবার সিলেট বিভাগে ২য় ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৭ হাজার ৬১২ জন। আবার ১ম ডোজ নিয়েছেন ৮৩৯ জন। বর্তমানে সিলেট বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ১ম ও ২য় ডোজ মিলে ৭ থেকে ৮ হাজার ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। আমাদের মজুত আছে ৭০ হাজারের মতো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আমরা চাহিদার কথা কেন্দ্রকে অবহিত করেছি। সমস্যাটি যেহেতু জাতীয় পর্যায়ের তাই স্থানীয়ভাবে খুব বেশী কিছু করার নেই। আমাদের বিশ^াস শীঘ্রই সমস্যা দুর হবে ফের ভ্যাকসিন কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ ম-ল বলেন, সিলেট জেলা ভ্যাকসিনের জন্য ১লাখ ৫১ হাজার ১৮১ জন নিবন্ধন করে প্রথম ডোজ নিয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার মতো। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪০ হাজারের মতো। জেলায় এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৫৪০ ডোজ ভ্যাকসিন মজুত আছে। যদি নতুন করে টিকা না আসে, সংকটেতো অবশ্যই পড়তে হবে। তবে কেউ প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ না পেলেও শারীরিক কোনো সমস্যা হবে না। এজন্য চিন্তার কোন কারণ নেই বলেও জানান তিনি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোঃ জাহিদুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, বৃহস্পতিবার সিসিক এলাকায় ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১৩৮৩ জন। এরমধ্যে ১ম ডোজ নিয়েছেন ৯২ জন ও ২য় ডোজ নিয়েছেন ১২৯১ জন। আমরা সিসিক এলাকার জন্য ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ হিসেবে ৫৯ হাজার ডোজ পেয়েছি। এরমধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছি ২৩ হাজার। এখন মজুদ আছে ১৩ হাজার। ইতোমধ্যে আরো ২০ হাজার ডোজ এর চাহিদাপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নতুন ভ্যাকসিন না আসলে মজুতকৃত ভ্যাকসিনে মে মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত চালানো সম্ভব হবে। এর মধ্যে ভ্যাকসিন না আসলে কার্যক্রম চালানো আর সম্ভব হবেনা। তবে আমাদের বিশ^াস এই সময়ের মধ্যে আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাবো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলা ছাড়াও বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জে ৭১ হাজার ১৯২ জন রেজিস্ট্রেশন করে ৬২ হাজার জনে ১ম ডোজ এবং ২২ হাজার জনে ২য় ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। জেলায় মজুদ আছে ২১ হাজার ৮০০ ভ্যাকসিন।
হবিগঞ্জ জেলায় ৭২ হাজার ২৩১ জন নিবন্ধন করে ১ম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ হাজার জন এবং ২য় ডোজ নিয়েছেন ২৫ হাজার জন। জেলায় ভ্যাকসিন মজুদ আছে ১৭ হাজার ৫০ জন ডোজ।
এছাড়া মৌলভীবাজারে ৭৮ হাজার ২১৪ জন নিবন্ধন করে ৬৮ হাজার জন ১ম ডোজ এবং ৩৩ হাজার জন ২য় ডোজ নিয়েছেন। জেলায় ভায়াল মজুদ আছে ১৩ হাজার ৪৬০ জন ডোজ।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা: মোহাম্মদ নুরে আলম শামীম বলেন, ভ্যাকসিনের চাহিদা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সরকার ভ্যাকসিন সরবরাহের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিশ^াস শীঘ্রই ভ্যাকসিন সংকটের সমাধান হবে। কোন কারণে যদি ভ্যাকসিন আসতে বিলম্ব হয়। তবে যারা ১ম ডোজ দিয়েছেন সময় মতো ২য় ডোজ না দিতে পারলে কোন সমস্যা হবেনা। এনিয়ে কারো চিন্তার কোন কারণ নেই বলেও জানান তিনি।