‘কিউলেক্স’ মশার রাজত্ব, অতিষ্ঠ নগরবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১১:০০:৫২ অপরাহ্ন
সন্ধ্যার পর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল
এ টি এম তুরাব :
নগরজুড়ে এখন কিউলেক্স মশার রাজত্ব চলছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন উপদ্রব বেশি চার গুণ। দিনরাত মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। বাসাবাড়ি-কর্মস্থান-কোথাও নিস্তার মিলছে না। দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মিলছে না মুক্তি। কাউকে বাসায় ঢোকাতে দরজা খুললে মুহূর্তের মধ্যে অগণিত মশা ঢুকে পড়ছে ঘরে। এছাড়া সন্ধ্যার পর বাইরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। এককথায় মশার যন্ত্রণায় নাজেহাল নগরবাসী।
এ দিকে খুদে প্রাণীটির বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে নগরবাসী। মশারি, কয়েল, অ্যারোসল স্প্রে, ধূপ, মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাট, ইলেকট্রিক আলোর ফাঁদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনে মশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কার্যকরভাবে পূর্বপ্রস্তুতি না নেওয়ায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, নগরীতে চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খাল-নালায় দেওয়া অস্থায়ী বাঁধের কারণে মশা বাড়ছে।
বিভিন্ন এলাকার জলাশয়গুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এগুলো মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এছাড়া মশকনিধন কার্যক্রমে ঢিলেমির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের লোকদেখানো ছিটানো এসব ওষুধ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জানুয়ারীর শুরু থেকেই নগরীতে কিউলেক্স মশার উপদ্রব সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে মশার উপদ্রব ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। নগরীতে এখন রীতিমতো চলছে মশার রাজত্ব। এরপরও সিটি কর্পোরেশন কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো ভ‚মিকা পালন করেনি।
বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, বাজার, উন্মুক্ত স্থান, সড়ক, পার্ক, খেলার মাঠ, মসজিদ-যেখানেই যান না কেন, মশার উপদ্রব থেকে কোনো নিস্তার মিলছে না। সিটির ব্যর্থতার কারণে মশার কয়েল, স্প্রে, মশারি বিক্রিও বেড়েছে। এসব পণ্যের বিক্রি বাড়াতে কৌশলগত কারণে নগরীতে মশার উপদ্রব বাড়ানো হয়েছে বলেও সংক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন।
এদিকে মশা নিয়ে শুধু নাগরিকরাই নন, অভিযোগ খোদ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদেরও। তারা বলছেন, ওয়ার্ডের জন্য সিটি করপোরেশনের বরাদ্দকৃত মশার ওষুধ ছিটানো হলেও সুফল মিলছে না। ছিটানো ওষুধ পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন অনেক কাউন্সিলর।
উপশহর বি ব্লকের বাসিন্দা রায়হান আহমদ চৌধুরী নাহিদ জালালাবাদকে বলেন, সন্ধ্যার পর কয়েল জ্বালিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। তার অভিযোগ, গত ৫ থেকে ৬ বাসার সামনে কিংবা আশপাশে মশার ওষুধ ছেটাতে দেখেননি তিনি। একই অভিযোগ মাছিমপুরের আমেরিকান প্রবাসী কয়েস আহাদের। তিনি বলেন, নগরবাসীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। অন্য অনেক দায়িত্বের মধ্যে একটি হচ্ছে মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করা। কিন্তু সিটি করপোরেশন মনে হয় তাদের এই দায়িত্বের কথাটি ভুলে গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে মশার প্রকোপ ব্যাপক বাড়লেও মশা নিধন করে জনদুর্ভোগ কমানোর ব্যাপারে সিসিকের কোনো উদ্যোগ নেই। এদিকে গত পহেলা মার্চ থেকে মশক নিধন অভিযান শুরু করলেও এখনো ২৭টি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ শেষ হয়নি।
লামাপাড়ার বাসিন্দা সামাদ আহমদ বলেন, মশার ওষুধ ছিটাতে গত দুই মাসে কেউ এ এলাকায় আসেনি। এলাকার খাল-নালাও পরিষ্কার হয়নি। সন্ধ্যায় বাসার সামনে দাঁড়ানো মাত্র মশা ঘিরে ধরে কামড়াতে থাকে। ভয়ঙ্কর অবস্থা।
শাহজালাল উপশহর যুব কল্যাণ পরিষদের সভাপতি নিজাম উদ্দিন ইমন বলেন, উপশহর মশার সাংঘাতিক উপদ্রব। এটি একটি অভিজাত এলাকা। সে হিসেবে আশা করেছিলাম হয়তো মশার উপদ্রব থেকে স্বস্তি পাব। তিনি বলেন, এ এলাকায় সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কাজ আছে। কিন্তু মশার উপদ্রব ঠেকাতে সে কাজ যথেষ্ট নয়। গত এক সপ্তাহে তিনি এলাকার মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি।
কোভিড ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মশক নিধন কার্যক্রম একটু ধীরগতিতে চলে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, মশার উপদ্রব বাড়লেও এই মশার কামড়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। সাধারণত এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়। কিন্তু এখন যে মশাগুলো নগরে আছে সেগুলো এডিস নয় কিউলেক্স মশা। যেগুলো ড্রেন, ছড়া, নালায় জন্ম নেয়। এই মশার কামড়ে ভাইরাসজনিত কোনো রোগ হয় না। মসকিটো এনার্জি বা বিভিন্ন ধরনের এনার্জি যাদের আছে তাদের মশার কামড়ের কারণে সমস্যা হতে পারে।