মোবারক হো মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১০:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন
সাঈদ আল মাদানী: আমাদের জীবনে নিজ ও পরিবারের প্রয়োজনে কেবল এক আল্লাহর কাছে ধর্ণা দেই। কোন কিছু পাওয়ার আশা তারই কাছেই করতে হয়। অনেকেই বলেন আমিতো দোআ করি কিন্তু কবুল হয়না। আসল কথা হল এমন কিছু কর্ম রয়েছে যা দোআ কবুলের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় সে বিষয়গুলি আমরা অনেকে জানিনা। যেমন-
এক. দুআয় শির্ক, বিদ’আতী পন্থায় দো’আ করা। আল্লাহ ব্যতীত কোনো নবী, অলী বা পীরদের মাজারে দো’আ করা, গাছ, পাথর, পাহাড়, দেব-দেবী, প্রতিকৃতির সামনে দো’আ করা শিরক। এমনিভাবে দো’আতে এমন অসীলা দেওয়া, কুরআন বা সহীহ হাদীসে যার প্রমাণ নেই।
দুই. মজলুমের বদ্ দোআ থেকে বেঁচে থাকা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু’আয ইবন জাবালকে ইয়েমেনে গভর্ণর করে পাঠান তখন তাকে কয়েকটি নির্দেশ দেন। তার একটি ছিল: ‘সাবধান থাকবে মযলুম বা অত্যাচারিত ব্যক্তির দো’আ হতে। জেনে রেখ! তার দো’আ ও আল্লাহর মধ্যে কোনো অন্তরায় নেই’। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)। রাসূলের বাণীর উদ্দেশ্য হলো, কখনো কাউকে সামান্যতম অত্যাচার করা যাবে না। নিজের কাজ-কর্ম, কথা দ্বারা কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তিন. হারাম খাদ্য হারাম বস্ত্র ও হারাম পানীয় পরিহার করা। মানুষের খাদ্য-পানীয় যেমন শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে তেমনি প্রাণ ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা আছে। খারাপ-পঁচা খাবার যেমন শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তেমনি অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদ ও খাবারও আত্মা ও প্রাণের ক্ষতি সাধন করে। সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, অন্যের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ দখল, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাত প্রভৃতি অবৈধ পদ্ধতিতে অর্জিত খাবার খেয়ে বা পোশাক পড়ে দো’আ করলে তা আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলদেরকে। তিনি বলেছেন: হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর; তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধুসরিত করেছে অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দো‘আ করে, হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কীভাবে তার দো‘আ কবুল করা হবে? (সহীহ মুসলিম)।
চার. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন অতঃপর তোমরা দো‘আ করবে কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না”। (তিরমিযী)।
পাঁচ. যে কোনো পাপ কাজ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দো‘আ করে, যে দো‘আতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দো‘আ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দো‘আ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দো‘আর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দো‘আর মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দো‘আ করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন’। (মুসনাদ আহমাদ)। আমরা এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দোআ কবুলের অন্তরায়সমূহ আলোচনা করলাম যাতে আমরা এ সমস্ত কর্মথেকে বেচে থাকতে পারি। সুতরাং আসুন আমরা সবাই বেশী বেশী দোআ করি। আল্লাহ তায়ারা আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ইমাম কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ, সিলেট।