স্বামী-সতীনদের হাতে নির্যাতিত গৃহবধূর বাড়িতে পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ৯:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন
ওসমানীনগর প্রতিনিধি: দৈনিক জালালাবাদে প্রকাশিত দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের শাহ সিকন্দর গ্রামে যৌতুকের দাবীর টাকা না দিতে পারায় স্বামী দেহ ব্যবসার কুপ্রস্থাব দিলে স্ত্রী রাজি না হওয়ায় স্বামী সতিন এবং ননদের গৃহবধূ নির্যাতনের খবর পড়ে এলাকার সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এলাকার সচেতন মহল পাষন্ড স্বামী, সতিন ও ননদের বিচার দাবী করেছেন। দৈনিক জালালাবাদে প্রকাশিত সংবাদ পড়ে ওসমানীনগর থানা পুলিশের একটি টীম নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে আইনি সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন।
নির্যাতিত গৃহবধূ সুহেনার শারিরীক অবস্থা তেমন ভাল নয়। নির্যাতনের ৩দিন পার হলেও তিনি শয্যা থেকে উঠে বসতে পারছেন না। অভাবগ্রস্ত কর্মহীন বয়োবৃদ্ধ পিতার কাঁধে দুই সন্তান নিয়ে উঠে অনেকটা বাকরুদ্ধ থাকছেন সারাদিন। কলেজ পড়–য়া ছোট তিন বোন আর মাদরাসায় হিফ্জ বিভাগের শিক্ষার্থী একমাত্র ছোট ভাইয়ের সেলাই কাজ ও টিউশনির টাকায় পরিচালিত পরিবারে বাড়তি আরো ৩জন যোগ হওয়াকে খুবই কষ্টকর মনে করছেন সুহেনা। রমজান মাসে পিতার অসচ্চল পরিবারে আরেকটি অসহায় পরিবার সওয়ারকে মেনে নিতে পারছেন না। তাছাড়া স্বামী সতিনের অমানুষিক মারধরের জন্যে শরীরে তীব্র বিষ, জ্বালা পোড়া অসহ্য যাতনায় জীবন নিয়ে আশংকা করছেন তিনি। আর্থিক অভাব আর করোনার ভয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা খুবই জরুরী।
ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের পূর্ব ব্রাহ্মনগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা ৭২ বছরের বয়োবৃদ্ধ আব্দুল লতিফের ৬ মেয়ে ও ১ ছেলে। পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সুহেনার অবস্থান দ্বিতীয়। সুহেনাসহ তিন কন্যার বিয়ে দিয়েছেন আব্দুল লতিফ। অবিবাহিত আরো তিন মেয়ের মধ্যে একজন বিএ তৃতীয় বর্ষ, একজন আইএ দ্বিতীয় বর্ষ, একজন আইএ প্রথম বর্ষ এবং একমাত্র ছোট ছেলেটি মাদরাসায় হিফ্জ খানায় (২৬ পারা হিফ্জ) অধ্যয়ন করছেন। তিন মেয়ে ও একমাত্র ছেলের পড়ালেখার পাশাপাশি সেলাইকাজ এবং টিউশনির আয় দিয়ে পরিবার চালাচ্ছেন। বৃদ্ধ পিতা অনেকদিন ধরে কাজ কর্মহীন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়ে সুহেনাকে ২০১৩ সালের ২৬ জুন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের শাহ সিকন্দর গ্রামের মৃত মনির আলীর পুত্র শাহিন মিয়া (৪০)’র সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর গত ২২ এপ্রিল বিকাল ৩টায় বর্বর পাষন্ড স্বামীর বসত ভিটা থেকে স্বামী সতিন ননদের হাতে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার সুহেনাকে শিকল বাঁধা অবস্থায় মাথা ন্যাড়া ছেড়া বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ।
উল্লেখ্য গত ২১ এপ্রিল সেহরির পর থেকে দক্ষিণ সুরমা উপঝেলার লালাবাজার ইউনিয়নের শাহ্ সিকন্দর গ্রামে স্বামীর বসত বাড়িতে যৌতুকের টাকা ও দেহ ব্যবসায় রাজি না হওয়ায় স্বামী সতিন মিলে গৃহবধূ সুহেনার পেছনে হাত বেঁধে বেধড়ক কিল, ঘুষি, লাথি ও কাঠের টুকরো দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত, শরীরের বিভিন্ন গোপন স্থানে বৈদ্যুতিক শক, ঘর থেকে টেনে হিচড়ে বের করে ব্লেড দিয়ে মাথার চুল ন্যাড়া করে মাথায় গরম আলকাতরা লেপটে দিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে শিকল দিয়ে বারান্দার বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন। আর এ পুরো কাজে উল্লাস প্রকাশ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে সমর্থন করেন ননদ পলি। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।