প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে হাওরপাড়ের জীবন চিত্র
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২১, ৭:৫২:৪১ অপরাহ্ন
তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, সুনামগঞ্জ : ডিজিটাল ব্যবস্থা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার কারণে শহরের পাশাপাশি বিশাল হাওর এলাকার নিভৃত পল্লীর বাসিন্দারাও পিছিয়ে নেই। গ্রামে বসেই তথ্য প্রযুক্তির সেবা পাচ্ছেন মানুষ। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে হাওরবাসির জীবন চিত্র।
মানুষ এখন আর রেডিও, টিলিভিশনের খবরের অপেক্ষায় থাকতে হয়না। ফেইসবুক, হোয়াটঅ্যাপ, টুইটারসহ নানান সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে প্রতিনিয়তই দেশ-বিদেশের খবরাখবর ঘরে বসেই জানতে পারছেন তারা। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল সেবার ছোঁয়ায়, শহরের পাশাপাশি নিভৃত হাওপাড়ের পল্লীতেও মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে। হাওরবাসির ভরসা বোরো ধান (এক ফসল) কর্তন করতে আগের মতো শ্রমিক যুগানোর চিন্তা না করে ধান কাটার প্রযুক্তি মেশিন কম্বাইন্ড হাব্রেষ্টার দিয়ে অল্প সময়ে ধান কর্তন করে উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন কৃষকরা।
ডিজিটাল সেবা প্রথমেই শহর কেন্দ্রীক অগ্রসর হলেও এর বিশাল একটি অংশ বিশেষ করে যারা হাওর অঞ্চলে বসবাস করেন তাদের জীবনমান ছিল অনেক পিছিয়ে। হাওরবাসিকে প্রতি নিয়ত হাওরের পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে জীবন ধারণ করতে হতো। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ-আগাম বন্যা, মৌসুমী বন্যা, শিলা বৃষ্টি, অতি বৃষ্টি, ঢেউ, আফাল, ঘূূর্ণিঝড় ও খড়া হাওরবাসীর জীবন ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটতো না। এ কারণে এলাকায় খাদ্য সংকটসহ, মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসতো। নারী ও শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় চরমভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতো। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটালবান্ধব বাংলাদেশ হওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে হাওরের বাসিন্দারাও সেবা নিয়ে অনেক এগিয়ে যাচ্ছেন। তারা গ্রামের বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সেবা নিচ্ছেন। মান্দাতা আমলের মতো আর কষ্ট করতে হচ্ছেনা তাদের। প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার গুরুত্ব দিন দিন উৎকর্ষ সাধন হওয়ায় মানুষও প্রাণভরে উপভোগ করছে এর সুফল। প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার কারণে কমেছে সময় ও ভোগান্তি। জীবনমান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কর্মসংস্থান। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার চেয়ে বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি এখন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রতিটি মৌলিক ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে ।
বর্তমান ডিজিটালবান্ধব বাংলাদেশে সর্বত্রই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে লাগামহীনভাবে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকান্ডে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার চোখে পরার মতো। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি সেবা খুব কম সময়েই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে।
সরকারি সেবাসমূহের তালিকা: ই-পর্চা, ই-বুক, ই-পুর্জি, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, ই-স্বাস্থ্যসেবা, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকরণ, টাকা স্থানান্তর, ইউপির সকল কাজ, পরিসেবার বিল পরিশোধ, পরিবহন অনলাইন রেজিস্ট্রেশন এমকি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থাও তথ্য প্রযুক্তিতে চলে এসছে। এতে করে অল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে সব কিছুর সেবাই পাচ্ছেন মানুষজন। ২০০৭ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ ছিল সম্ভাবনাহীন একটি দেশ। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি মডেল হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে মুহূর্তেই প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা গ্রহন করছেন দেশের নাগরিক। এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ রূপ নিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি বান্ধব বাংলাদেশে।
হাওরের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, আগে ধান কাটকে শ্রমিক নিয়া খুব দুশ্চিন্তায় থাকতাম। এখন ধান কাটার ডিজিটাল (কম্বাইন্ড হাব্রেষ্টার) মেশিন দিয়া অল্প সময়েই ধান কাটা ও মাড়াই করে রোদে শুকিয়ে গোলায় তুলতে পরছি। পাকনা হাওরের ঐতিহ্যবাহী পল্লী ফেনারবাঁক গ্রামের বাজারের ব্যবসায়ী আমীর হামজা বলেন, আমাদের গ্রামের চারিদিকে হাওর, বর্ষায় শুধু পানি আর পানি, হেমন্তে বোরো ফসলের মাঠ। এই গ্রাম থেকে মেইল করবো কখনো ভাবিনি। তথ্য প্রযুক্তির কারণে গ্রাম থেকেই ই-মেইল, ছাত্রদের ভর্তি, পরীক্ষার ফলাফল, করোনার রেজিষ্ট্রেশন ও সনদ, টাকা আদান প্রদানসহ আরো অনেক সেবা দিচ্ছি।
হাওর পাড়ের বাসিন্দারা তাদের অফিসিয়েল যে কোন কাজে অতীতে উপজেলা সদরে গিয়ে তাদের কাজ সম্পাদন করতেন। এতে অনেক আর্থিক ব্যয় ও সারা দিন চলে যেত। ডিজিটালের ছোঁয়ায় আগের মতো শ্রম, কষ্ট ও অর্থ ব্যয় হয়না। গ্রামে বসেই সব সেবা পাচ্ছেন তারা। এ কারনে তথ্য প্রযুক্তি বান্ধব বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে মানুষের জীবনমান উন্নীত হয়ে প্রতিনিয়তই সামনে অগ্রসর হচ্ছে ‘লাল-সবুজের ডিজিটাল বাংলাদেশ’।