৭ বছর পর সিলেটে টানা দাবদাহ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২১, ১০:০৪:৪৩ অপরাহ্ন
মামুন পারভেজ: সিলেটসহ সারাদেশে প্রচন্ড দাবদাহে জনজীবনে নেমেছে চরম দুর্ভোগ। গত ৭ বছর পর সিলেটসহ দেশের কয়েকটি স্থানে টানা তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বৃষ্টির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় টানা এই দাবদাহ।
গতকাল সোমবার দেশে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে সিলেটে একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বেড়ে তা ৩৭.৫ ডিগ্রিতে পৌছেছে। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম হওয়ায় সিলেটের শহরে তা ৪০ ডিগ্রি অনুভূত হয়েছে।
সিলেটে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় গরমের তীব্রতা বেড়েছে বলে জানান সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী।
এরআগে ২০১৪ সালে এপ্রিল মাসে টানা দাবদাহের কবলে পরে সিলেটসহ সারাদেশে। সে বছর ২৪ এপ্রিল সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.২ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। এরপর গত বছর এপ্রিল মাসে মাত্র ১ দিন সর্ব্বোচ তাপমাত্র ৩৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, শুধু সিলেট নয়, দেশের প্রায় সবখানেই রোদের তীব্রতা বেড়েছে। গতকাল সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজও তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানান সিলেটের আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী। গতকাল শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, সিলেটে গড় বৃষ্টিপাত অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। বছরের এই প্রাক বর্ষাকালীন সময়টায় অর্থাৎ মার্চ এপ্রিল মাসে যেখানে ৩৭৫. ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা সেখানে গত মার্চ মাসে মাত্র ১১৪ মিলিমিটার ও এপ্রিল মাসে মাত্র ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা খুবই কম। এমাসের শেষের দিকে সামান্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা পরিমাণে খুবই কম হতে পারে। এর প্রভাব তাপমাত্রায় খুব বেশি একটা পড়বে না বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। তবে মে মাসের শুরু দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কমার ঈঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। মে মাসের শুরু দিকে সিলেটসহ দেশের কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে গরমের তীব্রতা কিছুটা কমবে।
এদিকে আজ সকাল থেকেই সিলেটে কড়া রোদ। নগরীর আম্বরখানা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রোদে বাইরে থাকা শ্রমজীবী মানুষের চরম দুর্ভোগ। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। শিশু, মধ্যবয়স্ক, বৃদ্ধ সবাই তৃষ্ণার্ত। বিকাল গড়াতে অনেকে ডাবের দোকানে ভিড় করে ডাব কিনছেন। নগরীর ক্বীনব্রীজ এলাকায় আলী আমজাদের ঘড়িঘরের সামনে একটু গা জুড়ানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। প্রাণীকূলের মাঝেও এই গরমের তীব্রতা। রাস্তায় বেশ কয়েকটি কুকুরকে হা করে ঘনঘন নিশ্বাস নিতেও দেখা গেছে। কোথাও কোথাও পানির পাইপে তৃষ্ণার্থ পাখিদের পানি খেতে দেখা যায়।
হাউজিং এস্টেট এলাকায় এক বৃদ্ধ রিকশাচালক বলেন, ‘এই রোদে রিকশা চালাই না পাড়িয়া। রোজা রাখিয়া এই গরম রিকশা টানা যায় না।’
তীব্রগরমে ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় তাই দিনের বেলায় ছাতাসহ বাইরে বের হওয়া এবং ইফতার ও সেহরীর সময় প্রচুর পরিমাণ পানি এবং ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, বছরের এসময়টায় ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। যেহেতু রমজান মাস, তাই ইফতার ও সেহরীর সময় প্রচুর পরিমাণ পানি ও ফলমূল খেতে হবে। এছাড়া, দিনের বেলায় ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক ৪, খুলনায় তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক, রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৩, ময়মনসিংহে তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক, চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক, রংপুরে তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ২ এবং বরিশালে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে।