করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটের শঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৮:৩৩ অপরাহ্ন
এমজেএইচ জামিল : সিলেটে হু হু করে বাড়ছে করোনাক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে সিলেটে একদিনে সর্বোচ্চ ৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে। গত ৪ দিনে করোনায় সিলেটে মারা গেছেন ১৮ জন। প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে। রোগীর চাপে সিলেটের সরকারী ও বেসরকারী আইসোলেশনের পাশাপাশি আইসিইউ বেড নিয়ে চলছে হাহাকার। চিকিৎসায় বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদাও। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সাপোর্টেরও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বেসরকারীভাবে করোনা চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় সিলেটের একমাত্র সরকারী করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র ডা. শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালমুখী অধিকাংশ করোনা রোগী। মৃত্যু কিংবা সুস্থতা ছাড়া এই হাসপাতালের কোন আইসিইউ বেড খালি হচ্ছেনা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে কোন ঘোষণা ছাড়াই টানা ৪ দিন থেকে ভারত সরকার কর্তৃক তরল অক্সিজেন রপ্তানী বন্ধ ঘোষণা করায় অক্সিজেন সংকটে পড়ার আশঙ্কায় সিলেটের একমাত্র করোনা ডেটিকেটেড সরকারী হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড চিকিৎসা কেন্দ্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভারত থেকে আমদানী করে তরল অক্সিজেন সরবরাহ করতো স্পেকট্রা অক্সিজেন নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি ভারতে অক্সিজেনের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে ভারতে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু। কোন ঘোষণা ছাড়াই চারদিন ধরে ভারত থেকে অক্সিজেন রপ্তানী পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। এ অবস্থায় স্পেকট্রার পক্ষ থেকে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রথমে জানিয়ে দেওয়া হয়, যে তারা আগের মতো অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে রোগী বাড়ছে, এর বিপরীতে অক্সিজেনের সরবরাহ কমতে থাকলে খুব কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে হাসপাতালকে।
তবে বর্তমানে সিলেটে চাহিদা পরিমাণ অক্সিজেন মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও স্পেকট্রাও আগের মতো তরল অক্সিজেন সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে। রোববার স্পেকট্রা কোম্পানী ৬ হাজার লিটার লিকুইড অক্সিজেন সাপ্লাই দিয়েছে। এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন দৈনিক দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮শ লিটার অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই সরবরাহ করে স্পেকট্রা কোম্পানী। গত বছরের ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত করতে সিলেটে এই হাসপাতালটিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসায় কোম্পানিটি। যার ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার লিটার। সম্প্রতি স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের পক্ষ থেকে অক্সিজেন যতটুকু সম্ভব কম ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে। রোববারও স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড ৬ হাজার লিটার লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহ করেছে।
স্পেকট্রা থেকে অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের কথা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘যদি কোনোভাবে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তবে স্পেকট্রার পক্ষ থেকে যে কোন মূল্যে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আশ^স্থ করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনে ৬৯০ টন অক্সিজেন বাংলাদেশে রপ্তানি করে ভারত। তবে ২১ এপ্রিলের পরে ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানি। এই সময়ে ভারতে অক্সিজেনের সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবং নতুন স্ট্রেইনগুলো অতিমাত্রায় সংক্রামিত হওয়ায় রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই দেখা দিচ্ছে তীব্র শ্বাসকষ্ট। ফলে অধিকাংশা রোগীকে দিতে হচ্ছে অক্সিজেন। এছাড়া গুরুতর অসুস্থদের জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। বেশিরভাগ রোগীই তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছেন এবং তাদের হাই-ফ্লো নজেল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। কোন কারণে যদি স্পেকট্রা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া তাহলে সিলেটবাসীকে কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকবৃন্দ।