মোবারক হো মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০২১, ১১:০৮:২৩ অপরাহ্ন
সাঈদ আল মাদানী: আজ ১৬ রমজান ১৪৪১ হিজরি। ইসলামের জাকাত ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র বিমোচন করা। প্রথমত তাদের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটানো এবং দ্বিতীয়ত তাদের দারিদ্রের স্থায়ী সমাধান করা।
জাকাত আদায়ের খাত-
কুরআনে জাকাতের অর্থ ব্যয়ের জন্য ৮টি খাত উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “নিশ্চয় সাদাকাহ (জাকাত) শুধু অভাবীদের জন্য, সম্বলহীনদের জন্য, যারা এ খাতে কর্ম করে তাদের জন্য, যাদের অন্তর আকর্ষিত করতে হবে তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারণ। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী মহাপ্রজ্ঞাময়।” (সূরা তাওবাহ- আয়াত ৬০)। এ খাত সমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যখ্যা তুলে ধরছি। ১. ফক্বীর: নিঃসম্বল ভিক্ষাপ্রার্থী, ২. মিসকীন: যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না, মুখ ফুটে চাইতেও পারে না, বাহ্যিকভাবে তাকে সচ্ছল বলেই মনে হয়, ৩. আমেলীন: জাকাত আদায়ের জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ, ৪. ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তিগণ: অমুসলিমদেরকে ইসলামে দাখিল করাবার জন্য এই খাতটি নির্দিষ্ট, ৫. দাসমুক্তির জন্য: এই খাত বর্তমানে শূন্য। তবে অনেকে অসহায় কয়েদী মুক্তিকে এই খাতের অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন (কুরতুবী),। ৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি: যার সম্পদের তুলনায় ঋণের অংক বেশি। কিন্তু যদি তার ঋণ থাকে ও সম্পদ না থাকে, এমতাবস্থায় সে ফক্বীর ও ঋণগ্রস্ত দু’টি খাতের হকদার হবে। ৭. ফী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। ৮. দুস্থ মুসাফির: পথিমধ্যে কোন কারণবশতঃ পাথেয় শূন্য হয়ে পড়লে পথিকগণ এই খাত হ’তে সাহায্য পাবেন। যদিও তিনি নিজ দেশে বা বাড়ীতে সম্পদশালী হন। অত:পর জাকাতের সম্পদ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধান মূলনীতি হলো তা ব্যক্তিকে প্রদান করতে হবে এবং প্রদান নি:শর্ত হবে। জাকাত গ্রহণকারী ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ স্বত্ব, মালিকানা ও ব্যয়ের ক্ষমতা দিয়ে তা প্রদান করতে হবে। এজন্য জাকাতের অর্থ কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট ইত্যাদি কাজে ব্যয় করা যাবে না। অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তির দাফন কাফন বা ঋণ পরিশোধের জন্যও ব্যয় করা যাবে না। কারণ এখানে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে জাকাত সম্পদের মালিকানা প্রদান করা হচ্ছে না। কোনো নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যদি সঠিক খাতে ব্যয় করার জন্য জাকাত সংগ্রহ করে তাহলে তাদেরকে জাকাত প্রদান করা যাবে। উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা জাকাত প্রদানকারী মুসলিমের পক্ষ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত এটর্নি হিসাবে বিবেচিত হবেন। তাদের দায়িত্ব হলো সংগৃহীত জাকাত সঠিক খাতের মুসলিমগণকে সঠিকভাবে প্রদান বা বণ্টন করা। জাকাত গ্রহণকারী ব্যক্তি অবশ্যই মুসলিম হবেন। জাকাত শুধুমাত্র মুসলিমদের প্রাপ্য। কোন অমুসলিম জাকাত পাবেন না। মুসলিম নামধারী কোনো ব্যক্তি যদি নামাজ না পড়ে বা প্রকাশ্য শিরক বা কুফরীতে লিপ্ত থাকে তাহলে তাকে জাকাত দেওয়া যাবে না। একজন মুসলিম কোনো অমুসলিমকে নফল দান, সাহায্য ও সামাজিক সহযোগিতা করতে পারেন। কিন্তু তার ফরয দান বা জাকাত তিনি শুধুমাত্র মুসলিমকেই প্রদান করবেন। নিজের পিতামাতা, স্ত্রী ও সন্তানগণকে জাকাত দেওয়া যায় না। এছাড়া ভাই বোন, চাচা, মামা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন কেউ দরিদ্র হলে তাকে জাকাত দেওয়া যায়। বরং তাদেরকে সবচেয়ে আগে বিবেচনা করতে হবে। জাকাত এবং সকল দানের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি হলো এর উপকার যত ব্যাপক হবে সাওয়াবও তত বেশি হবে। যেমন, যে কোনো মুসলিম দরিদ্রকে জাকাত প্রদান করা যাবে। তবে একজন দরিদ্র তালেবে এলেম বা আলেমকে জাকাত প্রদান করলে এ সাহায্য তাকে অধিকতর ইলম চর্চা ও প্রসারের সুযোগ দেবে, যা উক্ত জাকাত দ্বারা অর্জিত অতিরিক্ত উপকার। এজন্য জাকাত দাতার সাওয়াব বৃদ্ধি পাবে। জাকাত ও উশর প্রদানের সময় এ মূলনীতির দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার, যেন আমাদের জাকাত শুধুই ব্যক্তিগত আর্থিক সাহায্য না হয়ে অধিকতর কিছু কল্যাণে পরোক্ষভাবে হলেও অবদান রাখে। কোনো ভাল মাদ্রাসায় যদি জাকাত তহবিল থাকে তাহলে আপনাদের জাকাত ও উশরের টাকা বা ফসল সেখানে দেবেন। এতে জাকাত আদায় ছাড়াও ইলম প্রচারের অতিরিক্ত সাওয়াব হবে। অনুরূপভাবে দ¦ীনদার দরিদ্র মানুষকে দিলে জাকাত আদায় ছাড়াও দীন পালনে সহযোগিত হবে। আল্লাহ তাআলা মুুূূুসলিম উম্মাহর সকল নিসাব পরিমাণ মালের মালিকদেরকে উল্লেখিত খাতসমূহে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক: ইমাম, কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ, সিলেট।