পণ্য বিক্রি প্যাকেজে : টিসিবি ডিলারদের স্বেচ্ছাচারিতা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১:০১:২৭ অপরাহ্ন
মামুন পারভেজ :
সিলেটে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। কম সময়ে অধিক পণ্য বিক্রির টিসিবির এই নীতিহীন কৌশলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ। তারা প্রয়োজনমতো পণ্য কিনতে পারছেন না।
রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকার স্থানীয় পর্যায়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তেল, ডাল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ ও খেজুর টিসিবির মাধ্যমে বিক্রয় করছে। বাজার দর থেকে কিছুটা কম মূল্য হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষ টিসিবির নির্ধারিত স্থান থেকে পণ্য কিনতে অধিক আগ্রহী। কিন্তু কম সময়ে সব পণ্য বিক্রি করতে প্যাকেজে পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন কতিপয় টিসিবির ডিলার। পণ্যের স্টক বেশি এই অজুহাতে রমজান মাসের শুরু থেকেই প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করছেন কিছু ডিলার। টিসিবি ডিলারদের এই সেচ্ছাচারি আচরণে সরকারের এই উদ্যোগ মাঠেমারা যাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
১২শ’ থেকে শুরু করে ৭২০ টাকা পর্যন্ত প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রাকে থাকা পণ্যগুলোর প্যাকেজ অর্থাৎ কয়েকটি পণ্য একসাথে ক্রয় না করলে টিসিবি’র ট্রাক পণ্য বিক্রয় করছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। কেউ যদি কোন একটি নির্দিষ্ট পণ্য ক্রয় করতে চায় ট্রাকের সাথে থাকা বিক্রয়কর্মীরা বিক্রি করেন না। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে প্রয়োজন না থাকা সত্বেও একাধিক পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যার কারণে বেশিরভাগ লোকই বিশেষ করে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের অনেকেই এসব ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারছেন না। পণ্য কিনতে এসেও অনেকেই শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছেন একাধিক পণ্য কেনার উপযোগী অর্থ না থাকায়। সিলেটের বাজার কর্মকর্তা বলছেন, প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করার নিয়ম নেই, তারা নিয়মিত মনিটরিং করছেন।
মেজরটিলার বাসিন্দা উত্তম দেব জানান, তিনি গত সপ্তাহে টিসিবি’র গাড়িতে পণ্য কিনতে গেলে তাকে ছোলা, চিনি, মসুর ডাল, খেজুর ও ২ লিটার তেল সহ ৭২০ টাকার প্যাকেজ নিতে বলা হয়। আমার ছোলা খেজুরের প্রয়োজন নাই। এগুলো ছাড়া পণ্য নিতে পারব কিনা জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মীরা না করে দেন। শেষে বাধ্য হয়ে ছোলা খেজুর সহ ৭২০ টাকার পণ্য কিনে আনি। এসময় অনেকেই পণ্য না কিনে ফিরে যান। অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ সারাদিন খেটে ৫০০ টাকা আয় করতে পারে না তারা ৭২০ টাকা দিয়ে কিভাবে পণ্য কিনবে। শুধু টিলাগড় নয়, রিকাবীবাজার, হাউজিং এস্টেট, দরগা মহল্লা, বাগবাড়ি এলাকায় টিসিবি’র প্যাকেজে পণ্য বিক্রয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এরআগেও সিলেটে এমনটা ঘটেছে। গতবছরের ডিসেম্বর মাসে প্রচুর পরিমাণে মানহীন মিশরী পেঁয়াজ আমদানি করে বিপাকে পড়ে টিসিবি। পরবর্তীতে পেঁয়াজ নেয়ার শর্তে অন্যান্য পণ্য বিক্রি করবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখন ৫ কেজি পেঁয়াজসহ প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। খেটে খাওয়া মানুষের উপর বাড়তি পণ্যের বোঝা চাপিয়ে দেয়াকে সেচ্ছাচারিতা বলে অভিহিত করেছেন ক্রেতাসাধারণ। তারা বলছেন প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে গিয়ে যদি অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে আনতে হয় তাহলে আমাদের লাভ কোথায় হচ্ছে। ৫/১০ টাকা বাঁচাতে গিয়ে উল্টো আরো শত টাকা অপচয় হচ্ছে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, টিসিবির আমদানিকৃত পণ্য নির্ধারিত পরিমাণে সরবরাহ করতে হয় ডিলারদের। অনেক সময় কিছু পণ্যচাহিদার তুলনায় বেশি চলে আসে এবং পণ্যগুলো পচনশীল হওয়ায় এগুলো নিয়ে ডিলাররা বিপাকে পড়েন। কিছুদিন আগে ডিলাররা প্যাকেজে বিক্রি করার উদ্যোগ নেয় পরবর্তীতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তা বাতিল করা হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে সিলেটের বাজার কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করার নিয়ম নেই। আমরা ডিলারদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছি এবং নিয়মিত মনিটরিং করছি। বর্তমানে তিনিটি পণ্য তেল, চিনি এবং মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে এবং যে কেউ আলাদাভাবে কিনতে পারবেন।
রমজান মাস কে সামনে রেখে সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯টা অবধি টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক তেল, ডাল, চিনি, ছোড়া, পেঁয়াজ ও খেঁজুর বিক্রি করছে। সিলেটে প্রতি লিটার ১০০ টাকায়, ডাল ও চিনি ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ছোলার দাম ৫৫ ও খেজুরের দা ৮০ টাকা নির্ধারণ কেরেছে টিসিবি। সিলেটে যে সব পয়েন্টে টিসিবি বিক্রি করেছে- মদিনা মার্কেট, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন, রিকাবীবাজার, টিলাগড় পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্টে, রেজিস্টারি মাঠ, বাগবাড়ি পিডিপি ও শাহী ঈদগাহ, দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা, গোঠাটিকর।
টিসিবি জানিয়েছে, রমজান মাস হিসেবে একজন ক্রেতা ট্রাক থেকে দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা দরে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল এবং ২০ টাকা দরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ ক্রয় করতে পারবেন। সিলেট বিভাগে ১৬১ জন টিসিবির ডিলার রয়েছেন জানা গেছে। কেউ চাইলে ডিলার থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।