মোবারক হো মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মে ২০২১, ১১:৩৪:৪০ অপরাহ্ন
সাঈদ আল মাদানী: আজ ২০ রমজান, ১৪৪২ হিজরি। অষ্টম হিজরির এই দিনে প্রায় বিনা রক্তপাতে বিশ্বনবী মুহাম্মাদুন (সা.) এর নেতৃত্বে হিজরতের অষ্টম বছরে ১০ হাজার মুসলিম সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মক্কা নগরী জয় করেছিলেন। তবে মক্কা জয়ের জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের অভিযান পরিচালনার পেছনে কাজ করেছে হুদায়বিয়ার সন্ধি। হিজরি ষষ্ঠ বছরে সম্পাদিত এ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছিল মক্কার কুরাইশরা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম প্রতিকার চেয়েছিলেন নইলে সন্ধির সমাপ্তি হয়েছে মনে করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কুরাইশরা কোনো সাড়া না দেয়ায় তিনি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। অষ্টম হিজরির রমজান মাসে এ অভিযান পরিচালিত হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১০ রমজান ১০ হাজার সাহাবীসহ মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করলেন। মক্কার উপকণ্ঠে এসে ‘মারাউজ জাহরান’ নামক গিরি উপত্যকায় তাঁবু স্থাপন করলেন। ১৯ রমাদান সকালে নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন দলকে মক্কার বিভিন্ন দিক থেকে প্রবেশের নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, কাউকে আক্রমণ করবে না। ইতোপূর্বে ‘মুতা’ অভিযানেও তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোনো সাধু সন্ন্যাসীকে হত্যা করবে না, বালক বালিকা ও শিশুদের হত্যা করবে না, নারীদের হত্যা করবে না, বৃক্ষ নিধন করবে না, শস্যক্ষেত্র ধ্বংস করবে না, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করবে না এবং আত্মসমর্পণকারীকে আঘাত করবে না। ২০ রমজান মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করেন। আল্লাহর হাবিব (সা.) মক্কা জয়ের আগেই মক্কাবাসীদের মন জয় করাকে বড় বিজয় মনে করলেন। এ সময় নবীজির চাচা হজরত আব্বাস (রা.) যিনি কৌশলগত কারণে মক্কাবাসীদের কাছে তাঁর ইসলাম গ্রহণ গোপন রেখেছিলেন, তিনিও তা প্রকাশ করলেন। নবীজি (সা.) তাকে শান্তির পয়গাম ঘোষণার জন্য প্রভাতে মক্কায় পাঠালেন এবং ঘোষণা দিতে বললেন: ‘যারা কাবাগৃহে আশ্রয় নেবে, তারা নিরাপদ, যারা আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে বা তাঁর নাম বলবে, তারা নিরাপদ, যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে, তারাও নিরাপদ। প্রায় রক্তপাতহীন সে অভিযানে ইসলামের নবীর পতাকা সেখানে সমুন্নত হয়। হজরত ইবরাহিম খলিল (আ.) এর একক প্রভুর ইবাদতের জন্য যে বায়তুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন, তা ভরে ফেলা হয়েছিল মূর্তি ও বিগ্রহে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর ঘর থেকে ৩৬০টি মূর্তি অপসারণ করেন। আর এতদিন যারা ইসলামের শত্রুতায় সদা প্রস্তুত ছিল, তাদের জন্য ঘোষণা করেন সাধারণ ক্ষমা। শান্তি ও মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করলেন ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম। তাই মক্কা বিজয়ের ঘটনা বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ঘটনা। আর সে কারণেই ২০ রমজান মুসলমানদের জন্য বিপুল গৌরবের স্মারক। মহানবী (সা.) ক্রীতদাস উসামা ইবনে জায়েদের সঙ্গে উটে চড়ে অবনত মস্তকে সবার শেষে মক্কায় প্রবেশ করলেন। হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মক্কাবাসীদের নিয়ে একটি সভা করলেন। তিনি ভাষণে সাম্য, মৈত্রী ও একতার কথা বললেন: ‘হে কুরাইশগণ! অতীতের সকল ভ্রান্ত ধারণা মন থেকে মুছে ফেলো, কৌলীন্যের গর্ব ভুলে যাও, সকলে এক হও। সকল মানুষ সমান, এ কথা বিশ্বাস করো। আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলকেই এক নারী ও পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদিগকে গোত্রে ও শাখায় পৃথক করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই বেশি সম্মানিত, যে বেশি পরহেজগার।” (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১৩)। তাই আসুন আমরা ইসলামের গৌরবময় ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজকে গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুন। আমিন।
লেখক, ইমাম কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ, সিলেট।