গ্রামে গ্রামে নবান্নের উৎসব
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০২১, ৯:৪৮:২৬ অপরাহ্ন
আব্দুল আহাদ, গোলাপগঞ্জ : গোলাপগঞ্জে বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। হাওর এলাকায় ৯৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হলেও স্থানীয় ভাবে অনেক এলাকায় ব্যাপক সংখ্যক জমিতে পাকা ধান রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বোরো ধান কাটা শেষ হবে বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক কৃষাণীসহ সকল স্তরের মানুষের মধ্যে বেশ আনন্দ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঝড় বাদল ও শিলা বৃষ্টি না হওয়ায় অগ্রহায়ন মাসের মতো হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় বোরো ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের টার্গেটের চেয়েও বেশী মাত্রায় বোরো ফলন হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানায়।
গোলাপগঞ্জে দিন দিন বোরো ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষক সমাজ। আউশ, আমন মৌসুমে বন্যা ও খরা ধান উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বলে চাষীরা হাঁড়ভাঙ্গা খাটুনীর পরও কাংখিত মানের ফসল সংগ্রহ করতে পারেন না। ফলে কৃষি পন্য উৎপাদনে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করার পরও ভালো ফলন না পাওয়ায় কৃষকরা বোরোধান চাষে ব্যাপক ভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে সার, বীজ কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করায় কৃষকরাও বোরো চাষে বেশ উৎসাহ পাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায় অন্যান্য বারের মতো এবারও শরিফগঞ্জ, বাদেপাশা, বাঘা, আমুড়া, ভাদেশ্বর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক পরিমানে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। হাকালুকি হাওরের তীর ঘেঁষা জনপদ শরিফগঞ্জ ও বাদেপাশা ইউনিয়নে প্রতিবারই ব্যাপক পরিমাণে বোরো ধান চাষ করা হয়। ওইসব ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার প্রতিটি জনপদে কম বেশী বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ওইসব এলাকায় ব্যাপক হারে বোরো ধানের ফলন হয়েছে।
বোরো ধান উৎপাদন ও সংগ্রহ সংক্রান্ত ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান প্রতিবেদককে জানান এবার গোলাপগঞ্জ উপজেলার হাওর অঞ্চলসহ বিভিন্ন বিল জলাশয় ও বোরো চাষের উপযোগী ৭ হাজার ১ শত ৮৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। ধান উৎপাদন ও ধান কাটার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সরকারি সহায়তায় বেশ কজন কৃষকের মধ্যে কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া উন্নত জাতের বীজ ও পর্যাপ্ত পরিমানের সার কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করায় কৃষকরাও অনেকটা আগ্রহী হয়ে কাজ করেছেন বলে তিনি জানালেন। তার তথ্যে জানা যায় হাওর অঞ্চলে ৯৫ ভাগ ও অন্যান্য এলাকাগুলোতে ৭৫ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামী এক সাপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যেসব এলাকায় বোরোধান কাটা হচ্ছে সে সব এলাকায় কৃষককূলসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যেন নবান্নের উৎসব কাজ করছে। কৃষক, কৃষানী ও তাদের সহযোগীরা দিন রাত ধান কাটা ও ধান সংগ্রহে ব্যস্ত থাকলেও কোন ক্লান্তির ছাপ নেই সবার মুখে দেখা যাচ্ছে হাসির ঝিলিক।