আল বিদা মাহে রমজান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২১, ১২:০৫:২৫ অপরাহ্ন
সাঈদ আল মাদানী :
কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, ঈমানের রুকনসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রুকন। মুলত আখেরাত কেন্দ্রিক জীবনই পারে মানুষকে কন্ট্রোল করতে। মানুষকে ভাল কাজের প্রতি সুসংবাদ দিতে। এবং অন্যায় কাজ থেকে মানুষদেরকে বিরত রাখতে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘পূর্ব এবং পশ্চিমে তোমাদের মুখ ফেরানোর মধ্যে কোন কল্যান নেই। কিন্ত পুণ্য তার যে বিশ্বাস স্তাপন করেছে ‘আল্লাহে, কিয়ামত দিবসে, ফেরেশতাকুলে, কিতাবসমূহে, এবং রাসূলবৃন্দের প্রতি’। (সূরা আল বাকারা-১৭৭)।
জিব্রাঈল (আ.) এর হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিব্রাঈল বলেন: হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবগত করুণ। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ঈমান হলে, আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশ্তা, তাঁর কিতাব সমূহ, তাঁর রাসূল (সা.) এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা, আরো ঈমান আনা ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি। [সহিহ্ মুসলিম]। আজকের প্রবন্ধে পরকালীন ভাবনা ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে চাই। মানুষ পার্থিব জগত এবং তার ভোগ-বিলাসের মাঝে ডুবে থেকে কিয়ামত, পরকাল এবং তথাকার শাস্তি ও নেয়ামতের কথা ভুলে যেতে পারে। ফলে আখেরাতের মঙ্গলের জন্য আমল করাও ছেড়ে দিতে পারে। এ জন্য মহান আল্লাহ কিয়ামতের পূর্বে এমন কতগুলো আলামত নির্ধারণ করেছেন, যা আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অকাট্য প্রমাণ বহন করে এবং সকল প্রকার সন্দেহ দূর করে দেয়।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’। (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)। সুতরাং প্রতিটি মানুষকে মরতে হবে। এটা যতটা সুনিশ্চিত এবং সর্বসম্মত, পৃথিবীতে এরচেয়ে সুনিশ্চিত ও সর্বসম্মত দ্বিতীয় কোনো বিষয় নেই। এই কথা শুধু মুসলমানই না, বরং প্রতিটি মানুষই বিশ্বাস করে। আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ জন্মেনি, মানুষের মৃত্যু হবে না বলে যে মত পেশ করেছে। মানুষ আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, আল্লাহর দিকে আহবানকারীদের মুখের ওপর বলে দিয়েছে, আমি আল্লাহকে মানি না। কিন্তু আজ পর্যন্ত মৃত্যুকে অস্বীকারকারী কারো দেখা পাওয়া যায়নি। যত বড় মুশরিক হোক কিংবা নাস্তিক হোক কিংবা ধর্মহীন হোক আজ পর্যন্ত কেউ বলেনি মৃত্যু আসবে না। সব বিষয়ে মতবিরোধ আছে। কিন্তু এটি এমন এক বিষয়, যা সম্পর্কে কারো ভিন্নমত নেই। মৃত্যু কখন আসবে, কেউ জানে না। এ বিষয়েও সবারই একমত। বিজ্ঞান উন্নতি করছে। মানুষ চাঁদে গিয়েছে। মঙ্গলগ্রহে যাচ্ছে। কম্পিউটার আবিষ্কার হয়েছে। কৃত্রিম মানুষ আবিষ্কার হয়েছে। আরো কত কী হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু বিজ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন যে, ভাই, সামনে উপবিষ্ট এ ব্যক্তির মৃত্যু কখন আসবে? সব জ্ঞান ও বিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এখানে এসে আত্মসমর্পণ করে। কেউ বলতে পারে না, মৃত্যু কখন আসবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো মৃত্যু যতটা নিশ্চিত বিষয় এবং মৃত্যুর ক্ষণ যতটা অনিশ্চিত, আমরা মৃত্যু থেকে ততটাই উদাসীন ও গাফেল। আমাদের মাথায় এ কথা বসে আছে যে, একটু জীবনটা উপভোগ করে নিই। এখনও তো আমি যুবক। ইবাদত ও নেক কাজ করার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে। পরে করে নেব।
আমাদের অবস্থা অনেকটা কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতায় শুন্য থাক। দূরের বাদ্য কি লাভ শুনে…মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক! আমাদের সমাজে আরো একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে ‘বাকির নাম ফাঁকি। আবার কেউ বলে, ‘নো চিন্তা ডু ফুর্তি’। “খাও-দাও ফুর্তি কর, দুনিয়াটা মস্ত বড়’। এসব নাস্তিক্যবাদী ধারণা মানুষেরা লালন করছে। কারণ, মানুষ মৃত্যুর ব্যাপারে উদাসীন। যদি প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যায় মৃত্যুকে স্মরণ করত এবং ভাবত, মৃত্যুর পূর্বে আমাকে এই এই কাজ করতে হবে তা হলে মৃত্যুর স্মরণ ও তার ফিকির আমাকে গুনাহসমূহ থেকে বাঁচাত এবং সৎপথে পরিচালিত করত। বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে মৃতুর পরবর্তি জীবনের জন্য প্রস্ততি গ্রহন করেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই যে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে’। (সুনানে তিরমিযি)।
তাই আসুন আমরা পরকালীর ভাবনা আমাদের মধ্যে আরো জাগ্রত করি। পাশাপাশী সেই অনন্ত জীবনের জন্য প্রস্ততি গ্রহন করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাউফিক দান করুন। আমিন। লেখক : ইমাম, কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ, সিলেট।