ফিলিস্তিনীদের অন্যরকম বিজয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২১, ৯:৩৪:১৬ অপরাহ্ন
ফিলিস্তিনীরা যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত সর্বহারা এমনকি স্বদেশ ও ভিটে মাটি হারা, তাই তাদের হারানোর তেমন কিছু নেই। বলা হয়, তাদের জন্ম দখলদারদের কবল থেকে মাতৃভূমি পুনরদ্ধারের জন্য এবং এটা করতে গিয়েই তাদের জীবন শেষ হয়ে যায়। এই সংগ্রামী ফিলিস্তিনীদের ওপর এখন চলছে এ যাবৎকালের সবচেয়ে জঘন্য অমানবিয় বর্বর হামলা, নিপীড়ন ও নির্যাতন। এই নির্যাতন ও হামলা ইসরাইলী হানাদাররা চালালেও এর পেছনে সাহায্য ও সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশের সরকার। এই অমানবিক তৎপরতা ও কর্মকা-ের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। সম্ভবত বিশ্বের কোন বিবেকবান ও মানবতাবাদী মানুষেরও তা নেই।
যা-ই হোক, হামলা বন্ধে বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংগঠন এবং বিবেকবান গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের আহ্বান সত্বেও হিং¯্র দখলকার খুনী ইসরাইলীরা গাজা উপত্যকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে গোটা গাজা ভূখন্ডে এক অন্তহীন মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দেখা দিয়েছে হিউম্যান ডিজাস্টার বা মানবিক বিপর্যয়। ইতোমধ্যে নারী ও শিশুসহ ২ শতাধিক ফিলিস্তিনী নিহত ও কয়েজ হাজার আহত হয়েছেন ইসরাইলীদের নির্বিচার বোমা ও গোলা বর্ষনে। বাস্তুহারা হয়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে কয়েক হাজার। এই ধ্বংসলীলা এখনো চলছে। বর্বরদের বর্বরতা থেমে নেই। সকল বিবেক, বিবেচনা, মানবতাবোধ ও মানবাধিকারের মুখে চুনকালি মেখে ইসরাইলী ঘাতক বর্বররা তাদের ঘৃণ্য ও নৃশংস হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে গাজা ভূখ-ে, এর প্রতিবাদে পশ্চিম তীর ও ইসরাইলী ভূখ-সহ সর্বত্র ফিলিস্তিনীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেছেন।
শুধু ফিলিস্তিন বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেই নয় ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত ফিলিস্তিনীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেছেন গাজায় ইসরাইলীদের বর্বর হামলা ও হত্যাকা-ের প্রতিবাদে। ইউরোপ ও আমেরিকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ। সত্যি বলতে কি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষও ইসরাইলীদের হত্যাকা- ও নৃশংসতায় ক্ষোভে ফুঁসছেন, প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুকসহ গণমাধ্যমগুলো এর প্রমাণ। প্রয়োজনে এদেশের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে লড়াই করতেও যে প্রস্তুত রয়েছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। অতীতে সিলেটসহ এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক তরুণ ও যুবক ফিলিস্তিনীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হানাদার ইসরাইলীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এমন বহু নজীর রয়েছে। প্রয়োজনে আবারো যে তারা তা করতে দ্বিধা করবেন না, এটা বাংলাদেশী জনগণের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও বক্তব্য থেকেই ফুটে ওঠেছে, প্রকাশ পাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তবে এটা এখন দিবলোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মদদপুষ্ট ইসরাইল এবার গাজায় হামলা চালিয়ে যতোটা না লাভবান হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। সেটা আর্থিক এবং নৈতিক উভয়ভাবেই। এবার ইসরাইলী নৃশংস হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে ফিলিস্তিনীদের প্রতি বিশ্ববাসীর সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিলিস্তিনীদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিলেও তাদের শৌর্যবীর্য, ত্যাগ ও দেশপ্রেম এখন ইতিহাস ও কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে।
তাদের ঈমানদারি ও জিহাদ মুসলমানদের সকল নিপীড়িত মুসলমানদের কাছে আশার আলোকবর্তিকা ও গাইড লাইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরাক্রমশালী নিষ্ঠুর ইসরাইলীদের অভ্যন্তরে আঘাত হানার বিষয়টি এতোদিন ছিলো অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় অনেকের কাছে। কিন্তু দুঃসাহসী হামাসের যোদ্ধারা সেই মিথ বা বদ্ধমূল বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করেছে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে দেশটির অর্ধডজন বিমানবন্দর, তেল স্থাপনা এবং রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে। এটা ইসরাইলীদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। শুধু মার দেয়ার অভ্যাস ছিলো যে ইসরাইলীদের, এখন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চারদিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানা হয়ে গেছে তারা। আর এটাই ফিলিস্তিনী তথা হামাস যোদ্ধাদের সাফল্য ও বিজয়ের মূল বিষয়।
যার অনেক কিছু থাকে, তার হারানোর ভয় থাকে। কিন্তু সর্বহারা ও স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে লড়াইরত ফিলিস্তিনীদের হারানোর কিছু নেই। তাই এবারের যুদ্ধে শত দুর্ভোগ ও দুর্দশা সত্বেও তারা যা অর্জন করেছে, তা কম নয়। তারা শত্রুর বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে, এটাই তাদের বিজয় ও সফলতা। এক সময় এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সফলতার পথ ধরে তারা হয়তো একদিন পৌঁছে যেতে পারবে বিজয়ের চূড়ান্ত শিখর, এমন প্রত্যাশা অমূলক নয়। বিশ্বের সকল বিবেকবান মানুষের মতোই আমরা এমন কিছুই কামনা করি।