ট্রাজেডির নাম বজ্রপাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২১, ১২:০২:০২ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
দেশের সবচেয়ে বেশী বজ্রপাতপ্রবন জেলা সুনামগঞ্জ। হাওরবেষ্টিত এ জেলায় প্রতিবছর বজ্রপাতে মানুষ মারা যান। নিহতদের মধ্যে কৃষক ও জেলেদের সংখ্যাই বেশী। হাওরে আরেক ট্র্যাজেডির নাম এখন বজ্রপাত। গত ৪ বছরে এ জেলায় বজ্র আঘাতে ৫১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বজ্র আতংক নিয়ে হাওরের মানুষ মাছ ধরা, ধান কাটা সহ বিভিন্ন কাজ করেন। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও বজ্রপাত ঠেকাতে সরকারি ভাবে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছে ৫১ জন জেলে ও কৃষক। ২০১৮ সালে মারা যান ২৫ জন, ২০১৯ সালে ৯ জন, ২০২০ সালে ১০ জন ও ২০২১ সালের এ পর্যন্ত মারা যান ৭ জন। স্থানীয়রা বলছেন, নিহত ব্যক্তিরা হাওরে ধান কাটা কিংবা মাছ ধরতে ও গোবাদিপশু ছড়াতে গিয়ে মারা গেছেন। প্রতি বছর নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেয়নি সরকার। এছাড়া হাওরে বজ্রপাতের সময় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারেন না তারা। সেই সময়, সুযোগ,সুবিধা কোনটি নেই হাওর এলাকায়। এছাড়া আবহাওয়ার আগাম বার্তা না পাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরা, ধান কাটা সহ বিভিন্ন কাজ করেন হাওর এলাকার মানুষ। এসব কারণেই মৃত্যু সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে বলে তারা মনে করেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বজ্রপাতে কেউ মারা গেলে নিহতের পরিবারে ২০ হাজার টাকা ও আহত ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয়। খবর নিয়ে জানা গেছে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বজ্রপাতে নিহত হওয়ার পর পরিবার পরিজন নি:স্ব হয়ে গেছেন। তাদের দেখভাল করার কেউ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাবিবুর রহমান বলেন, ৬২৯টি বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। আশাবাদী আগামী বছর বজ্রপাত ঠেকাতে এসব বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করা হবে। ২০১৭ সালের নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়, সারা বিশ্বে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কঙ্গোর কিনমারা ডেমকেপ এলাকায়, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। সুনামগঞ্জে মার্চ থেকে মে এ তিন মাসে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাতের পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবেই বেশি। ভারতের খাসিয়া পাহাড় ও মেঘালয় এলাকায় মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত মেঘ জমে থাকে। স্থরীভূত মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে ওই এলাকার পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতের সংখ্যাও বেশি হয়ে থাকে।
আর এ বজ্রপাতে বাংলাদেশের হাওর প্রধান জেলা সুনামগঞ্জে প্রতিবছর প্রাণ হারায় অনেক মানুষ। হাওর প্রধান জেলা হওয়ায় কৃষি ও মৎস্য আহরণ এই দুইটি সুনামগঞ্জের আয়ের প্রধান উৎস হলেও সেই হাওরেই প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রাণ দিতে হয় অনেককে।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, সুনামগঞ্জে প্রতি বছর হাওরে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে কৃষক, জেলেসহ নিম্ন আয়ের মানুষ মারা যান। বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে হাওরে গাছ লাগানোর কথা চিন্তা করছি আমরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানোর লক্ষ্যে আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলক ভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা পটুয়াখালী এবং চট্টগ্রামে এই সেন্সর বসানো হয়েছে।
বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে দেশবাসীকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে সতর্কবার্তা দিতে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলক বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা পটুয়াখালী এবং চট্টগ্রামে এই সেন্সর বসানো হয়েছে। তবে এ যন্ত্র থেকে এখনো সতর্কবার্তা পাওয়া যাচ্ছে না।
২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু হয়েছে সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও সাতক্ষীরায়। এর পরই সিলেট ও হবিগঞ্জ।