দু’টি জরুরী বিষয়ে আলোকপাত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২১, ৭:৫২:৩৭ অপরাহ্ন
দু’টি বিষয়ের প্রতি আমাদের অধিক মনোযোগ ও দৃষ্টি দেয়া এখন অত্যন্ত জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে কিন্তু এ মুহূর্তে দুটি বিষয়ে গভীর মনোযোগ প্রদান এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। বিষয় দু’টি হচ্ছে, অগ্নিকা- এবং পানিতে ডুবে মৃত্যু।
গত শনিবার সিলেট নগরীর সবুজ বাগ এলাকায় সংঘটিত এক অগ্নিকা-ে একটি বসত বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুসারে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বসতঘরে। এতে আসবাবপত্রসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
গত এক মাস যাবৎ সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে মৌলভী বাজারের জুড়িতে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকা-ে কোটি টাকারও বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো গোটা এলাকায়। এছাড়া প্রায় প্রতি সপ্তাহে এক বা একাধিক অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে এ অঞ্চলে। বর্তমানে অধিকাংশ অগ্নিকা-ের ঘটনায় শর্ট সার্কিটকে কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। প্রথমে দেখা যাক, শর্ট সার্কিট জিনিসটা কী এবং কীভাবে এটা হয়ে থাকে। শর্ট সার্কিট হচ্ছে, যেদিকে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হওয়াার কথা সেদিকে না গিয়ে ভিন্ন পথে সঞ্চালিত হওয়া। সাধারণতঃ এ অবস্থা তখনই সৃষ্টি হতে দেখা যায়, যখন বিদ্যুৎ প্রবাহকে বৈদ্যুতিক লাইনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ধরে রাখতে অসমর্থ হয়। তখন বিদ্যুৎ প্রবাহ লাইনচ্যুত হয়ে ভিন্নপথে গিয়ে অগ্নিকা-, বিস্ফোরণসহ ভয়ানক কা- ঘটায়।
একথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি তেমন না থাকলেও সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি বিচ্যুতি ও দুর্বলতার কোন অভাব বা ঘাটতি নেই। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সরকারী লাইনে যেমন দুর্বলতা ও ত্রুটি বিদ্যমান তেমনি তা বিদ্যমান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ লাইনেও। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেমন অগ্নিকা- হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে বাড়িঘরে। এদিকে সরকারী কর্তৃপক্ষের যেমন গুরুত্ব ও মনোযোগ দিতে হবে, তেমনি বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকগণকে নজর দিতে হবে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, শহর কিংবা গ্রামাঞ্চলে নিজেদের বাড়িঘর বা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের পর ৫০/৬০ বছর অতিবাহিত হলেও সেগুলো মাঝে মাঝে ভালোভাবে পরীক্ষা করতে দেখা যায় না এসবের মালিকদের। এ বিষয়ে বিদেশে সরকারী কর্মকর্তাদের নজরদারি থাকলেও এদেশে এমন কিছুর বালাই নেই।
ফলে প্রায়ই ঘটছে শর্ট সার্কিটের ঘটনা। এতে মূল্যবান সরঞ্জামসহ সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। অগ্নিকা-ের আরেকটি বড়ো কারণ হচ্ছে, মশাল কয়েল। বর্তমানে মশার কয়েল ছাড়া রাতে এক ঘন্টাও তিষ্ঠানো দায়। এটা থেকে প্রায়ই অগ্নিকা- হচ্ছে। ইদানিং সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকেও অগ্নিকা- সংঘটিত হচ্ছে। এসবের প্রতি নজর দেয়া দরকার। এসব অগ্নিকা-ের মূল কারণ দূরীকরণে এখনি সতর্ক হতে হবে, পদক্ষেপ নিতে হবে। এর পাশাপাশি অগ্নিনিরোধক ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। যেসব স্থানে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন নেই, সে সব স্থানে তা স্থাপন করতে হবে। আর যেসব স্টেশনে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম নেই, সেগুলোতে এসব সরবরাহ করতে হবে।
আরেকটি আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, পানিেেত ডুবে মৃত্যু। ইদানিং প্রায় প্রতি সপ্তাহে এক বা একাধিক ঘটনা ঘটছে পানিতে ডুবে মৃত্যুর। অত্যন্ত মর্মান্তিক এসব ঘটনা শিশু, কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ঘটছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে গবেষণা ও আলোচনাও হয়েছে। দেয়া হয়েছে কিছু পরামর্শও। তা সত্বেও বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার মতো এক্ষেত্রেও দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। আমরা শহরতলী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকে তাদের সন্তানদের পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধে আরো সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সাথে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।