বিকাশে প্রতারণা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মে ২০২১, ৭:৪৭:৩৮ অপরাহ্ন
গত বৃহস্পতিবার দৈনিক জালালাবাদসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ‘বিকাশে প্রতারণা, জগন্নাথপুরে নারীসহ গ্রেফতার ৩’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিকাশে প্রতারণার দায়ে ৩ জনকে আটক করেছে র্যাব। প্রতারক চক্রের কাছ থেকে একটি ল্যান্ডফোন, ১২টি মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এটিএম কার্ডসহ ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬শ’ টাকা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বক্তব্য অনুসারে, তারা গত ১ বছর যাবৎ বিভিন্ন নামে বেনামে সিমকার্ড সংগ্রহ করে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে আসছে।
বলা বাহুল্য, বিশ্বে কম পরিশ্রমে ও প্রায় বিনা পুঁজিতে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে মোক্ষম পন্থা হচ্ছে প্রতারণা। এতে যতোটুকু শ্রম দিতে হয়, তার চেয়ে বেশী কাজে লাগাতে হয় কূটকৌশল বা চালাকি, তাই অপরাধীদের অতি পছন্দের পেশা বা কাজ হচ্ছে প্রতারণা। সময়ের পরিবর্তনে প্রতারণার ধরণ ও কৌশলে এখন পরিবর্তন এসেছে। ইদানিং আধুনিক প্রযুক্তিতে বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারণার বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে মোবাইল ইন্টারনেট ইত্যাদি হয়ে ওঠেছে প্রতারণার নতুন ক্ষেত্র ও হাতিয়ার। কয়েক বছর আগে প্রতারকরা মোবাইল কিংবা ইন্টারনেটে নানা ধরনের পুরস্কার পাওয়ার লোভ দেখিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতো। বর্তমানে তারা বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা শুরু করেছে।
বিভিন্ন কৌশলে গ্রাহকের পিন নম্বর জেনে নেয়া থেকে শুরু করে ভুঁয়া পরিচয়ে বিভিন্ন বিকাশ একাউন্টে টাকা পাঠানোর অনুরোধ ও বার্তার মাধ্যমে তারা প্রতারিত করছে লোকজনকে। এক্ষেত্রে তারা প্রবাসী বা দেশের দূরবর্তী স্থানের লোকজনদের কাছে আত্মীয় স্বজন এমনকি পরিবারের সদস্য সেজে তাদের দেয়া বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠানোর মেসেজ দিয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অসুস্থতার দোহাই দিয়ে গলার স্বর পাল্টে ফোন করে থাকে। আত্মীয় বা পরিবারের সদস্য অসুস্থ জানিয়ে টাকা পাঠানোর জন্য জরুরী কল দিয়ে থাকে। এছাড়া বিকাশের পিন নম্বর জেনে নিয়ে সংশ্লিষ্ট একাউন্ট থেকে টাকা আত্মসাৎ করে কিংবা সেই একাউন্টের টাকা পাঠানোর জন্য ঘনিষ্ট ও স্বজনদের টাকা প্রেরণের জন্য বলে থাকে। এভাবে ইতোমধ্যে সিলেট অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য লোক প্রতারিত হয়েছেন। খুইয়েছেন লাখ লাখ টাকা। পিন নাম্বার জানার জন্য প্রতারকদের নানা কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যায়। অনেক সময় তারা ফোন করে একজন বিকাশ একাউন্টের গ্রাহককে বলে যে, আপনার একাউন্ট এক্ষুনি ভেরিফাই না করলে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে, তাই পিন নাম্বার তাদের বলতে হবে। প্রতারক নিজেকে বিকাশের কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলে পরিচয় দেয়। অনেক ক্ষেত্রে বলে যে, একাউন্টে বেশ কিছু টাকা জমা হয়েছে, গ্রাহক তা জানেন কি-না। এভাবে গ্রাহককে প্রলুব্ধ করে পিন নম্বর জেনে নেয়। পরে সেই পিন নম্বর ব্যবহার করে তার আত্মীয় স্বজনদের ম্যাসেজ পাঠিয়ে বা ফোনালাপের মাধ্যমে নানা অজুহাতে অর্থ আত্মসাত করে।
যা-ই হোক, বিকাশের মাধ্যমে প্রতারকদের এ ধরনের প্রতারণার বিষয়ে বিকাশ কর্তৃপক্ষকে বার বার সতর্ক করে দিতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এ ব্যাপারে প্রচারণা অব্যাহত আছে। কিন্তু এসব সত্বেও সাধারণ মানুষ বিশেষভাবে মানুষের অসতর্কতা ও অসচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে এসব প্রতারক লোকজনকে প্রতারণা করে চলেছে। দেখা গেছে, যারা নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়েন না কিংবা টিভি দেখেন না, তারাই বেশী প্রতারকদের এমন ফাঁদে পা দেন। আর এসব প্রতারণার ঘটনা বিষয় যারা জানেন বা পত্রিপত্রিকা ও টিভিতে শুনে থাকেন তারা এদের হাত থেকে রেহাই পেতে সক্ষম হন। ফোনে কথা বলার সময়ই প্রতারকেরা বুঝতে পারে ভিকটিম এ ব্যাপারে সচেতন কি-না। সচেতন বুঝতে পারলে, তাৎক্ষণিকভাবে তারা ফোনের লাইন কেটে দেয়।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা মোবাইল অপারেটরদের সিম রেজিষ্ট্রেশনে আরো সতর্ক হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন, কারণ সিম রেজিষ্ট্রেশনে ত্রæটি থাকার ফায়দা নেয় প্রতারক চক্র। এছাড়া বিকাশে যেই নম্বর দিয়ে একাউন্ট খোলা হবে, সেটি যেনো একমাত্র জাতীয় পরিচয়ের নম্বর অনুযায়ী দেয়া হয়, এতে অভিযান চালানো সহজ হবে। শুধুমাত্র সিমের ওপর নির্ভর করে অভিযান চালালে অনেক বেগ পেতে হয়।
ইদানিং বিকাশে প্রতারণা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিকাশ গ্রাহকদের যেমন সচেতনতা প্রয়োজন তেমনি বিকাশ কর্তৃপক্ষ ও মোবাইল অপারেটরদের সিম রেজিষ্ট্রেশনে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অভিযোগ রয়েছে, মোবাইল অপারেটরদের অভ্যন্তরে কিছু অসাধু ব্যক্তি প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত কিংবা তাদের অপকর্মে সহায়তা করে থাকে। অনেকের মতে, অপারেটরের লোকজনদের সহায়তা ছাড়া এমন অবাধে ও ব্যাপকভাবে তারা নামে বেনামে এতো বিপুল সংখ্যক সিম ব্যবহারের সুযোগ পেতো না। এদিকেও মোবাইল অপারেটরদের কঠোর দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।