আসছে গরু, ঢুকছে মাদক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২১, ৩:০৪:৫৭ অপরাহ্ন
এ টি এম তুরাব :
সিলেটের সীমান্তপথে অবৈধপথে ভারত থেকে অবাধে প্রবেশ করছে গরুসহ নানান পণ্য। ঢুকছে ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ মাদকদ্রব্য। রাতের অন্ধকারে কাঁটাতার বিহীন এলাকা দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারতে প্রবেশ করছে। সেখানে কয়েক দিন অবস্থান শেষে তারা গভীর রাতে ফিরে আসছে বাংলাদেশে। এতে ভারতীয় করোনাভাইরাস এবং ব্লাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের ঝুঁঁকি অনেকটা বেড়ে গেছে।
এদিকে, গত ১৩ মে ভারতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার ৯ দিন পর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আসমা বেগম (৪৮) নামের এক নারী মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি করোনা শনাক্ত হয়েছিলেন। এনিয়ে আতংকের মধ্যে রয়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, ভারতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে এমন শংকায় সরকার সীমান্ত দিয়ে সবধরণের যাতায়াত ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা দিয়ে সীমান্তে বাড়ানো হয় নজরদারী। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতার পরও সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে মানুষ প্রবেশ করছে। আসছে গরু-মহিষ, সিগারেট-বিড়ি, কসমেটিক্স, ঔষধ। বন্ধ হয়নি মাদক ও অন্যান্য চোরাই পণ্য আসা।
একটি সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় বড় বড় চোরাকারবারী সিন্ডিকেট ও মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকায় এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। জৈন্তাপুরের আসামপাড়া, মোকামপুঞ্জি, আলুবাগানের অনেকেই গরু, কসমেটিক্স ও মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। এদের অনেকের নামে একাধিক মামলা চলমান আছে, অনেকে কারাগারেও রয়েছেন।
সূত্রটি আরো জানায়, তারকাঁটাবিহীন সিলেটের জৈন্তাপুরের আদর্শগ্রাম, শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি, আলুবাগান, নলজুরী এলাকায় বিজিবি, পুলিশ, ডিবি’র লাইনম্যান বেন্ডিস করিমকে চোরাকারবারীরা টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে সীমান্ত দিয়ে দেদারছে ঢুকছে ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য। গরুর সঙ্গে ঢুকছে মাদকদ্রব্যের চালান। তবে বৃষ্টির রাতে এ পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বেশি হয়। বিজিবি এবং পুলিশের অভিযানে কিছু চোরাকারবারি ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকরে তারা সহজেই বেরিয়ে আসছেন।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের সিঙ্গারীরপাড়, বালিদাঁড়া, ইয়াংরাজা, আফিফা-নগর চা-বাগান, বাঘছড়া, তুমইর, জঙ্গীবিল, লালখাল চা-বাগান, লালাখাল গ্রান্ড। নিজপাট ইউনিয়নের লালাখাল রিসোর্স সেন্টার এলাকা, কালিঞ্জিবাড়ী, জালিয়াখলা, হর্নি, বাইরাখেল, নয়াগ্রাম, মাঝরবিল, গোয়াবাড়ী, কমলাবাড়ী, টিপরাখলা, ফুলবাড়ী, মহিষমারা, ঘিলাতৈল, খলারবন্দ, আতাউরের বাগান, আসামপাড়া, ডিবির হাওর, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের কেন্দ্রী বিল, কেন্দ্রী হাওর, কাঁঠালবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, মিনাটিলা, ছাগল খাউরী, আসামপাড়া, আদর্শগ্রাম, শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি, আলুবাগান, নলজুরী গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ এই চোরাচালানের সাথে জড়িত। এসব এলাকার ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকার কারণে অনেক বাড়ী চোরাই মালামালের গডাউনে পরিণত হয়েছে। এ গ্রামগুলো থেকে সারা দেশে গরু ও মাদক পাচার করা হয়।
সীমান্তবর্তী সূত্র জানায়, করোনা মহামারির কারণে কয়েক মাস সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু আসা বন্ধ থাকলেও ফের আসতে শুরু করেছে। আর অবৈধভাবে আনা এসব গরু স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখান থেকে ট্রাকে করে তা নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী চারিকাটা ইউনিয়নের অন্তত ৪০ জন, নিজপাট ইউনিয়নে ৭০ জন এবং ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ৬০ জন ব্যবসায়ী গরু-মহিষ অবৈধ পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। তিন ইউনিয়নে প্রায় ৮৫ জন মাদক ব্যবসায়ী, মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল, হরলিক্স, জুতা, প্যামপাস, কসমেটিক্স, জিরা অবৈধ পথে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি। এর বাহিরেও আছেন হরিপুর ও দরবস্ত এলাকার আরো অর্ধশতাধিক চোরাকারবারী পুলিশ, ডিবি ও বিজিবি’র কিছু সদস্যকে লাইনম্যানের মারফতে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে অবাধে ভারতীয় গরুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। চোরাকারবারীদের গরু ও চোরাচালান পাচারে সহযোগিতা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সদস্যরাও। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতেও চান না।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ভারতীয় করোনাভাইরাস যাতে কোনোভাবেই প্রবেশ করতে না পারে এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সজাগ রয়েছি। তিনি বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ ও চোরাচালন রোধে পুলিশের পাশাপাশি বর্ডারগার্ড, র্যাবসহ গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক চোরাচালান সামগ্রী ও চোরাচালানী আটক করা হয়েছে।