মসজিদে জেরার জাহান্নামে নিয়ে যায়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২১, ৬:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন
মুন্সি আব্দুল কাদির
মসজিদ আল্লাহর ঘর। মুসলমানদের ইবাদত খানা। মহান রবের প্রিয় স্থান। মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হৃদয় শেষ বিচারের দিন আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবে। মহান মালিকের সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণকারীর জন্য জান্নাতে মহান মালিক ঘর তৈরি করে দেন।
মহান আল্লাহ কালামে হাকিমে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। মুসলিম সমাজে এই মসজিদ কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে শান্তি বিরাজ করে। যতদিন মুসলিম সমাজে মসজিদের প্রতি সকলের হৃদয়ের টান ছিল ততদিন শান্তিও ছিল। এর বিপরীতে এমন মসজিদের অস্তিত্ত্বও আছে যা খুবই নিকৃষ্ট। যে মসজিদ তার নির্মাতাকে, তার মধ্যে নামাজ আদায়কারীকে জাহান্নামে নিয়ে ছাড়বে। যাদেরকে মহান রব নিজেই মিথ্যাবাদী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
হজরত হানজালা রা. এক কথা আমরা জানি। যার শহীদ হওয়ার পর ফেরেস্তারা আকাশে নিয়ে তাকে গোসল করিয়েছিলেন। তার পিতার নাম আবু আমর। তিনি ছিলেন, খৃষ্টান পাদ্রি। মদিনার লোকজন তাকে সম্মান করত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনে তার অন্তর জ্বালার শেষ ছিল না। তিনি মদিনার মুনাফেকদের শলা পরামর্শ দিয়ে মসজিদে কুবার খানিক দূরে একটি মসজিদ বানালেন। সেখানে ১২ জন মুনাফেক সংশ্লিষ্ট ছিল। মসজিদ বানানো শেষ হলে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল আমরা অসুস্থ আর দুর্বল লোকদের জন্য এই মসজিদ বানিয়েছি। যারা এত দূর থেকে মসজিদে কুবায় এসে নামাজ আদায় করতে পারে না। বৃষ্টি বাদলা আর প্রচন্ড শীতের সময় যাতে আমাদের মসজিদে আসতে কষ্ট না হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাদের নিয়ত খুব সহিহ। আপনি এসে নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদটি উদ্ভোধন করে দিন, বরকতময় করে দিন। এই ঘটনাটি ছিল তাবুক যুদ্ধের কয়েকদিন আগে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য ব্যস্ততায় ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ঠিক আছে এখন আমি সফরে ও জিহাদের কাজে ব্যস্ত আছি। ফিরে এসে সেখানে গিয়ে আমি নামাজ আদায় করব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবুক যুদ্ধ শেষে ফিরে আসছেন। মদিনায় পৌঁছতে একদিনের পথ। তারা সে মসজিদে জুমআর নামাজ আদায় করছে। ওয়াক্তিয়া নামাজগুলোও আদায় করছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার নিকটবর্তী যু আওয়ান নামক স্থানে পৌঁছতেই জিব্রাইল আ. এর আগমন ঘটে এবং এই মসজিদ সম্পর্কে সুরা তাওবার আয়াতগুলো নাজিল হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখনই দুই সাহাবীকে এই মসজিদটি জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠালেন। তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় পৌঁছার আগেই এই মসজিদ একেবারে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, (মুনাফেকদের) যারা মসজিদে যেরার (ক্ষতিকর মসজিদ) বানিয়েছে, (তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে) কুফরি করা, আর ঈমানদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, আর তার ঘাঁটি স্বরূপ যে এর আগে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল, তারা নিশ্চয়ই হলফ করে বলবে ”আমরা সৎ উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে এটি করিনি।’’ কিন্তু আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে তারা ডাহা মিথ্যাবাদী।
তুমি কখনো এতে দাঁড়াবে না। নিঃসন্দেহ সেই মসজিদ যা প্রথম দিন থেকেই ধর্মনিষ্ঠার উপরে স্থাপিত তার বেশি দাবি রয়েছে যে তুমি সেখানে দাঁড়াবে। তাতে এমন লোক রয়েছে যারা (ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে) নিজেরা সব সময় পাক পবিত্র হওয়া পছন্দ করে। আর আল্লাহপাক পবিত্র লোকদের ভালোবাসেন।
আচ্ছা! যে তা’হলে তার ভিত্তি গড়েছে আল্লাহ্র ভয় ও সন্তুষ্টির উপরে সে উত্তম, না যে তার ভিত্তি স্থাপন করেছে পতনপ্রায় গর্তের কিনারার উপরে, ফলে তা তাকে নিয়ে অচিরেই জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়বে? আর আল্লাহ্ তায়ালা জালেম লোকদের পথ দেখান না।
তাদের যে ভবন তারা বানিয়েছে তা তাদের হৃদয়ে অশান্তি সৃষ্টি থেকে বিরত হবে না, যদি না তাদের হৃদয় ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। আর আল্লাহ্ তায়ালা সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী। সুরা তাওবা আয়াত ১০৭-১১০।
আমাদের কারো সাথে একটু বনিবানা না হলে। আমার সামান্য নেতৃত্ব চলে গেলে, আমরা চটে যাই। সেই আবু আমেরের ইতিহাস জেনে দেখুন। সে তার বংশের সম্মানী ব্যক্তি ছিল। সকলে তাকে দরবেশ হিসাবে জানত। যখন দেখল তার সম্মানে আঘাত আসছে। তখনই সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে লেগে গেল। এবং সর্বশেষ মুনাফেকদের দিয়ে মসজিদ বানালো। আর মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সবকিছু জানিয়ে দিলেন। মসজিদ ধ্বংস করা হল।
আপনার অনেক টাকা থাকতে পারে, আপনি অনেক সম্মান আর মর্যাাদার অধিকারী হতে পারেন। নিজের স্বার্থে একটি মসজিদ বানাতে পারেন না। আমরা সকলে আমাদের নিজের কবরেই যাব। মহান আল্লাহ বলেন, “তারা তার ভিত্তি স্থাপন করেছে পতনপ্রায় গর্তের কিনারার উপরে, ফলে তা তাকে নিয়ে অচিরেই জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়বে।” তাফসীরকারকগন এর ব্যাখ্যায় বলেন, যারা এমন মসজিদ নির্মাণ করবে, তারা যেন এমন, যে তারা নদীর কিনারায় ঘর নির্মাণ করল। ঘরটি সুন্দর করে সাজালো। নিজের সব মালামাল সেখানে জমা করল। অথচ সে জানেই না নদীর নিচ দিয়ে ¯্রােত মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় তার মাল সামানা সহ এই ঘরটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। অর্থাৎ তাকে সহ জাহান্নামে নিয়ে যাবে।
আল্লাম বগভী র. বলেন, বনী আমর ইবনে আউফের লোকেরা যারা মসজিদে কুবা নির্মাণ করেছিলেন, তারা খলিফা ওমর রা. এর নিকট হাজির হয়ে মাজমা ইবনে হারেসাকে মসজিদে কুবার ইমাম নিযুক্ত করার অনুরোধ জানালেন। ওমর রা. সাফ না করে দিলেন। আর বললেন তার নয়ন যুগল শীতল না হোক। সে কি মসজিদে জেরারের ইমাম ছিল না? মাজমা রা. সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন আমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে তাড়াহুড়া করবেন না। তাদের নিয়ত কি ছিল, আমি জানতাম না। আমি যদি জানতাম তাহলে আমি সেখানে ইমামতি করতাম না। আমি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলাম। কিন্তু আমি কোরআন পাঠ করতে পারতাম। আর এই লোকগুলো ছিল মুর্খ, বৃদ্ধ। এজন্য আমি নামাজ পড়িয়েছি। আমি মনে করেছিলাম মসজিদ নির্মাণে তাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। তাদের মনের গোপন ইচ্ছা সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। তারপর খলিফা তাকে মসজিদে কুবার ইমাম নিযুক্ত করেন।
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি মসজিদে জেরার বা ক্ষতিকর মসজিদ কেউ বানাতে পারে না, কেউ সাহায্য করতে পারে না, কেউ সেখানে নামাজ আদায় করতে পারে না, কেউ সেখানে ইমামতি করতে পারে না। তাহলে নামাজ আর নামাজ থাকবে না। এই নামাজ নিয়ে যাবে জাহান্নামে।
যে কেউ মনোকষ্ট পেয়ে, অর্থ বিত্তের দাপটে, সামাজিক পদ পদবি হারিয়ে, অহংকার হিংসায় আরো একটি মসজিদ করে ফেলতে পারে, অনেক মানুষ তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। এরকম মসজিদে অনেক মুসল্লির সমাগম হতে পারে। সুবক্তা কোন মাওলানা সাহেব ইমাম হিসেবে চাকুরী নিতে পারেন। কিন্তু ভাবা উচিত যে আমাদের এ সবগুলো কাজ থেকে দূরে অনেক দূরে থাকা উচিত, যদি আমরা পরকালীন মুক্তির আশা করি। দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ লাভ করতে চাই। নয়তো এই কাজে জড়িত কেউই মুক্তির আশা করতে পারি না।