জকিগঞ্জে মাল্টার বাম্পার ফলন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৬:০৭:০৯ অপরাহ্ন
এখলাছুর রহমান, জকিগঞ্জ: বাড়ির পাশের জায়গাটি মূল্যবান হলেও সেখানে কাঙ্খিত ফসল ফলানো হয়ে উঠে না কোনো কৃষকেরই। অনেকটা অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকে সেটি। এমনই প্রায় পরিত্যক্ত একটি জমিতে মাল্টা চাষ করে কৃষি বিভাগকে চমকে দিয়েছেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার হালঘাট গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন। ২০১৯ সালে ৩ লাখ টাকা, পরের বছর ৮ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করলেও এবার লক্ষ্য ১০ লক্ষ টাকা।
ইসমাইল হোসেন জানান, জকিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী মাঠ কর্মকর্তা বলাই বিশ্বাস প্রথম তাকে মাল্টা চাষের পরামর্শ দেন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৬০ শতক জায়গায় মাল্টা চাষ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে আরো ৫০ শতক জায়গায় সম্প্রসারিত হয় এ বাগান। মাল্টা গাছের চারা, সার, কিটনাশক ও পরামর্শ সবই বিনামূল্যে দেয় কৃষি বিভাগ। চারা রোপনের তিন বছরের মাথায় আশাতীত ফলন পায় ইসমাইলের পরিবার। যে জমিতে সব মিলিয়ে বছরে ২০ হাজার টাকার ধান পাওয়া যেতো সেখান থেকে এবার প্রায় ১০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির প্রত্যাশা ইসমাইলের। ৯ সে্েপ্টম্বর থেকে মাল্টা বিক্রি শুরু করেন। এবারও গত বছরের মতো প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে টক মিষ্টির মাল্টা।
প্রতিদিন দৃষ্টিনন্দন মাল্টা বাগান দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন লোকজন। কৃষি বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জের কৃষকগণ দফায় দফায় পরিদর্শন করেছেন এ প্রদর্শনী বাগানটি। জকিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, সাইট্রাস ফসলের মধ্যে মাল্টা অন্যতম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৩ সালে ‘বারি মাল্টা-১’ নামে মাল্টার যে উন্নত জাত উদ্ভাবন করে তা দেখতে সবুজ, খেতে সুস্বাদু ও রসালো। শুষ্ক মাঝারী উঁচু জমি যেখানে রোদ পরে সেটি মাল্টা চাষের জন্য উপযুক্ত।
সিলেট অঞ্চলে শষ্যের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় জকিগঞ্জ উপজেলায় ৬০ শতক জমির ১২টি এবং রাজস্ব খাতের অর্থায়নে ৩০ শতকের ২০টি মাল্টা বাগান করা হয়েছে। তবে ইসমাইল হোসেনের বাগানটি শুধু সিলেট বিভাগ নয় দেশের অন্যতম একটি মাল্টা বাগান।
ইসমাইলের বাবা আসাব আলী জানান, জমিতে মাটি ভরাট ছাড়া তার নিজের খরচ হয়েছে মাত্র হাজার বিশেক টাকা। মাল্টা বাগানে ইসমাইলের সাথে পরিচর্যার কাজ করেন তার বাবা আসাব আলী, ভাই আলী হোসেন ও কাওছার আহমদ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমী আক্তার বলেন, বিষমুক্ত পুষ্টিকর লাভজনক মাল্টা চাষের দৃষ্টান্ত ইসমাইল হোসেন। সিলেটের পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে অন্যদের কাছে অনুকরণীয় হতে পারেন ইসমাইল। উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জকিগঞ্জের কৃষক ইসমাইল আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন জকিগঞ্জের মাটি মাল্টা চাষের উপযোগী।