জনবল সংকটে ভোক্তা অধিকার খর্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২১, ৩:৩০:০৮ অপরাহ্ন
সিলেটের ১ কোটি ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে ৬ জন
দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার জন্য ১০৮ জন
জালালাবাদ রিপোর্ট : জনবল সংকট নিয়েই চলছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এই সংস্থাটি ১২ বছরেও পরিপূর্ণ রূপ পায়নি। পায়নি প্রয়োজনীয় জনবল। অর্জন করতে পারেনি আইন বাস্তবায়নের সক্ষমতা। সিলেট বিভাগের ১ কোটি ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছেন মাত্র ৬ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় অফিসে রয়েছেন ২ জন কর্মকর্তা। এরমধ্যে ১ জন উপ পরিচালক ও ১ জন সহকারী পরিচালক। এছাড়া ৪ জেলায় রয়েছেন কেবল ৪ জন সহকারী পরিচালক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লজিস্টিক সাপোর্টের কারণে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া এখন ভেজাল পণ্য উপজেলা পর্যায়ে বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে সেখানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
মানুষ সচেতন হওয়ার ফলে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে অধিদফতরের এ কর্মকর্তা জানান, এখন অভিযোগের পরিমাণ বাড়ছে। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হটলাইন চালু হচ্ছে। এখন অভিযোগ আরও বাড়বে। ভোক্তাদের সন্তুষ্টি অর্জন ও অধিদফতর সচল রাখতে প্রয়োজনীয় লোকবলের পাশাপাশি লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার বলে তিনি জানান।
অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক মো: ফখরুল ইসলাম দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, জনবল সংকটের কারণে অফিস শেষে তাদের নিজেদেরকেই তালা মেরে বেরুতে হয়। তিনি বলেন, বিভাগের ১৩ উপজেলায় ১৩ জন এডি (সহকারী পরিচালক) প্রয়োজন। কিন্তু একজনও নেই। এ অবস্থায় কাজ-কর্ম চালানো খুবই কঠিন।
যে কোনও ভোক্তা তার অধিকার নিশ্চিত করতে বা পণ্য কিনে ঠকলে প্রতিকার চেয়ে অধিদফতরে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগ দায়ের করা যাবে অধিদফতরের উপ-পরিচালক, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়। সহকারী পরিচালক, সিলেট জেলা কার্যালয়। সহকারী পরিচালক, সুনামগঞ্জ জেলা কার্যালয়। সহকারী পরিচালক, হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয় এবং সহকারী পরিচালক, মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়। এ ছাড়াও প্রত্যেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা যাবে।
ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়েও অভিযোগ দাখিল করা যাবে। অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে। অভিযোগকারীকে তার পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করতে হবে।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ক্ষমতাবলে ভোক্তা অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করছে সংস্থাটি। তবে আইন প্রয়োগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা না থাকায় সাধারণ মানুষ এই সংস্থা ও আইনের সুফল সেভাবে পাচ্ছে না। তার ওপর জনবল সংকট তো রয়েছেই।
অথচ দেশে অধিকাংশ পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভেজাল ও প্রতারণার মচ্ছব চলছে। বস্তুত বাজারে মাছ-মাংস, দুধ-ডিম ও ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ভেজালের মিশ্রণসহ নানা প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যক্তিরা অধিক মুনাফার লোভে মত্ত হয়ে একদিকে চাল, মাছ, সবজি, মসলা, দুধ, দই, মিষ্টি, বেকারি পণ্যসহ নকল ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করছে; অন্যদিকে বিভিন্ন সেবা প্রদানে অবাধে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। পাশাপাশি পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা ভোক্তা অধিদফতরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দেশে ২ হাজার ৩০৫ জন জনবল নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন প্রাথমিক পর্যায়ে ২০৬ জনবল অনুমোদন করেছে। প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই নগণ্য ও অপ্রতুল।
জানা গেছে, দেশের ১৬ কোটির অধিক সংখ্যক ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির জনবল রয়েছে মাত্র ২০৮ জন। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ করা জনবলের সংখ্যা মাত্র ১০৮ জন। শুধু তাই নয়, রাজধানী ঢাকায় অন্তত ২ কোটি ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন মাত্র ৫ জন কর্মকর্তা।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, ‘যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।’
তবে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে তা তদারকি করে ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শাস্তি ও জরিমানা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অমীমাংসিত রয়ে যাচ্ছে শত শত অভিযোগ। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে তা তদারকি করে ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শাস্তি ও জরিমানা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।