ভুক্তভোগী ভোক্তা সমাচার
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২১, ৮:৪২:২৬ অপরাহ্ন
এদেশের কনজ্যুমার বা ভোক্তারা নিজেদের অধিকারের ক্ষেত্রে বহুলাংশে বঞ্চিত ও অরক্ষিত। সাধারণ ক্রেতা বা ভোক্তাদের অবস্থা নাজুক, অনেক ক্ষেত্রে তারা অসহায়। কারণ আমদানীকারক পাইকারী, খুচরো ও আড়তদার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রবল দৌরাত্ম্যের মধ্যে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সংগ্রহ অর্থাৎ ক্রয় করতে হয়। দেশে একটি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থাকলেও এর কার্যক্রম ও কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সীমিত ও দুর্বল। তাই প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই সংস্থা সাধারণ জনগণকে যথেষ্ট সুরক্ষা দিতে সক্ষম হচ্ছে না।
জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এই সংস্থাটি ১২ বছরেও পরিপূর্ণ রূপ পায়নি। পায়নি প্রয়োজনীয় জনবল। অর্জন করতে পারেনি আইন বাস্তবায়নের সক্ষমতা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিলেট বিভাগের এক কোটি ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছেন মাত্র ৬ জন। দেখা যাচ্ছে, এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে ভেজাল পণ্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে সেখানে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেখা গেছে, ভোক্তা অধিদপ্তর মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু বড়ো বড়ো প্রতিষ্ঠানকেই টার্গেট করা হয়। মাঝারি কিংবা ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে নজরদারির বাইরে থেকে যায়। অথচ এসব মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই স্বল্প আয়ের সাধারণ ভোক্তা বা ক্রেতারা পণ্য ও সেবা ক্রয় করে থাকেন। এভাবে জনবলের অভাবে এসব অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা তাদের ইচ্ছামতো ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করে, অস্বাভাবিক মূল্য আদায় করে ভোক্তা ক্রেতাদের নিকট থেকে। এ বিষয়ে নজরদারি হয় না বললেই চলে। সিলেটে মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাদেরকে নগরী বা শহরের কিছু বড়ো বড়ো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করতে দেখা যায়। বার বার তারা এসব প্রতিষ্ঠানেই অভিযান চালান। অথচ এগুলোর বাইরে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। জড়িত ভোক্তা ক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে।
অধিদপ্তরের আদেশে বলা হয়েছে, যে কোন ভোক্তা তার অধিকার নিশ্চিত করতে বা পণ্য কিনে ঠকলে প্রতিকার চেয়ে অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারবেন। ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইট ইত্যাদি ইলেক্ট্রোনিক মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়েও অভিযোগ করা যাবে। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আইন প্রয়োগের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা না থাকায় সাধারণ মানুষ এই সংস্থার সুফল ভালোভাবে পাচ্ছেন না।
বলা বাহুল্য, দেশে অধিকাংশ পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভেজাল ও প্রতারণার মচ্ছব চলছে। মাছ, মাংস, সবজী, দুধ, ডিম, ফলমূল থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতে অসততা ও প্রতারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অসাধু ব্যক্তিরা অধিক মুনাফার লোভে একদিকে চাল, মাছ, সবজি, মশলা, দুধ, দই, মিষ্টি, বেকারি পণ্যসহ নকল ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে, অপরদিকে বিভিন্ন সেবা প্রদানে অবাধে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। এছাড়া পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা করছে। পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য আদায় করছে ভোক্তা ক্রেতাদের নিকট থেকে। এক্ষেত্রে সবজির উদাহরণ দেয়া যায়, সবজি বিক্রির জন্য কৃষককে বাজারে যেতে হয় না। মাঠ থেকেই নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। এতে পরিবহন খরচ বাঁচলেও প্রকৃত দাম পান না কৃষক। মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে কম দামেই সবজি বিক্রি করতে হয়। এভাবে ৮ টাকায় বিক্রি করা সবজি ভোক্তাকে ৮০ টাকায় কিনে খেতে হয়। মাঠ থেকে সবজি ভোক্তা পর্যন্ত যেতে মধ্যস্বত্বভোগীর লাভ, অস্বাভাবিক পরিবহন ব্যয়, চাঁদা বাজারদের বখরা ও আড়তদারদের মুনাফা দিতে হয়। অথচ চাইলে সংরক্ষণ অধিদপ্তর এসব ব্যাপারে মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারতো। কিন্তু এসবের তেমন কিছুই করতে পারছে না এই অধিদপ্তর। দেশজুড়ে এই অধিদপ্তরের কার্যক্রম বৃদ্ধি করা গেলে এদেশের ভোক্তা ক্রেতা সাধারণ পণ্য ও সেবা ক্রয়ে অনেকটাই স্বস্তি পেতো, রক্ষিত হতো তাদের ন্যায্য অধিকার। আমরা জনবল বৃদ্ধিসহ এই অধিদপ্তরকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি, দেশের ভোক্তা তথা ক্রেতা সাধারণের অধিকার যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও নিশ্চিতকরণে এবং দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।