ইংরেজি ও আইসিটি’তে দুর্বলতা প্রসঙ্গে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ৭:৩৭:৩৩ অপরাহ্ন
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, চাকুরির নিয়োগে প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি অদক্ষ ‘ইংরেজি ভাষা ও যোগাযোগে’। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি এই জরিপ পরিচালনা করে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি ৪১টি বিশ^বিদ্যালয়ের ৫শ’ চাকুরি প্রার্থীর নিকট থেকে তথ্য নিয়ে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে সহযোগিতা করে জার্মানভিত্তিক সংস্থা ফ্রেডারিক এবার্ট স্টিফটার অনলাইন জরিপে ৯টি বিষয়ে নিয়ে চাকুরি প্রার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় বলে জানা গেছে যোগাযোগ ও ইংরেজি দক্ষতার ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে চাকুরি প্রার্থীরা মাত্র ৩০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন।
বলা বাহুল্য, এদেশের চাকুরীপ্রার্থীদের ইংরেজিতে অদক্ষতার বিষয়টি বড়ো ধরণের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। দেশে কিংবা বিদেশে চাকুরি ক্ষেত্রে ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকায় বাংলাদেশী চাকুরি প্রার্থীদের চাকুরি পেতে যেমন অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে, তেমনি চাকুরি করতেও অসুবিধা হচ্ছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রতিবেশি শ্রীলংকা, ভারত ও পাকিস্তানের অনেক প্রবাসী বিদেশে ভালো বেতনে যে চাকুরি পাচ্ছে বা করতে সক্ষম হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশী চাকুরি প্রার্থীরা সেই চাকুরি পাচ্ছেন না বা করতে সক্ষম হচ্ছেন না শুধুমাত্র ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকার কারণে। দীর্ঘদিন যাবৎ এমনটি দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক যুক্ত হয়েছে আরেকটি বিষয়। সেটা হচ্ছে ইনফরমেশন এণ্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) অর্থাৎ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি। ইংরেজির মতো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশী চাকুরি প্রার্থীরা এখনো অনেক পেছনে পড়ে আছেন। আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান বিশে^ ১১৯তম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ০.৫১৮৯। ২০১৮ সালে এক্ষেত্রে অবস্থান ছিলো ১১৫তম। গত ক’বছরে আইসিটি ইনডেক্সে বাংলাদেশ না এগিয়ে বরং পিছিয়ে অতীতের চেয়ে বাংলাদেশে আইটি ক্ষেত্রে অনুশীলন বা চর্চা বাড়লেও সামগ্রিকভাবে আশানুরূপ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটেনি এই খাতে। ফলে দেশ বিদেশে বাংলাদেশী চাকুরি প্রাথীরা আইটি ক্ষেত্রে অদক্ষতার কারণেও কাঙ্খিত চাকুরি পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সচেতন মহলের মতে, বাংলাদেশের চাকুরির বাজারের চাহিদা ভিত্তিক দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাছাই করে শিক্ষা ও মানসিক কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে খাতভিত্তিক পড়াশোনা করিয়ে চাকুরির বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল গড়ে তোলা সম্ভব।
তাদের মতে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ আছে। শিক্ষার্থীদের বাছাই করে খাতভিত্তিক পড়াশোনা করানো হচ্ছে না। এখন সবাই সরকারি চাকুরি করতে চায়। খাতভিত্তিক পড়াশোনা ও মানসিকভাবে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা না থাকার কারণে কেউ শিল্পে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নেয় না। একইভাবে বিদেশে চাকুরি ক্ষেত্রেও একই কারণে সমস্যা হচ্ছে। আধুনিক যুগোপযোগী ও চাকুরিমুখী শিক্ষক, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে এদেশের বিদেশে চাকুরিপ্রার্থীরা মার খাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আমরা শিক্ষিত বেকার তৈরি করতে চাইনে। তিনি এদেশের কারিকুলাম তথা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে এ কথা বলেছেন। প্রতি বছর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় থেকে লক্ষাধিক তরুণ যুবক বিএ এমএ ইত্যাদি ডিগ্রি নিয়ে বেরোচ্ছে। কিন্তু এসব ডিগ্রি তাদের চাকুরি ও পেশা ক্ষেত্রে তেমন কাজে আসছে না। এভাবে শিক্ষিত বেকারে ভরে ওঠেছে এদেশ। বেকারত্ব এখন জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়ে অনেকটা বিস্ফোরণন্মুখ হয়ে ওঠেছে। তাই এ সমস্যা মোকাবেলায় এখন থেকেই শিক্ষার গলদ দূর করে কর্মমূখী তথা পেশাভিত্তিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে শিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো কৃষি নির্ভর। এদেশে আজো যথেষ্টা শিল্পায়িত হয়ে ওঠেনি। তাই দেশের শিল্পখাতে কাজের সুযোগ কম এদেশের শিক্ষার্থীদের। এ অবস্থায় বিদেশে যে সব কাজও পেশা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা করা দরকার এদেশের শিক্ষার্থীদের এর পাশাপাশি দেশে শিল্প কারখানা স্থাপন, বিনিয়োগ এবং দেশীয় তরুণ যুবাদের নিয়োগের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। সর্বাগ্রে দূর করতে হবে এদেশের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও আইসিটি ক্ষেত্রে দুর্বলতা। ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার এণ্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেজ (বিএএসআইএস) এর তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে দেড় সহস্রাধিক সফটওয়্যার ও আইটি রিলেটিভ নিবন্ধিত কোম্পানী রয়েছে। তা সত্বেও বাংলাদেশ কেনো এখনো এক্ষেত্রে এতো পিছিয়ে আছে, তা অনুসন্ধান জরুরি। আশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা সরকার এসব বিষয়ে অবিলম্বে দৃষ্টি ও মনোযোগ দেবেন।