বিআরটিসি বাস নিয়ে হঠকারিতা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ৩:০৬:৩৬ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জ-সিলেটে কমেছে ট্রিপ, রাজস্ব আয় ২২ লাখ থেকে নেমেছে ৪ লাখে
মামুন পারভেজ : সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসি’র বাসে প্রশাসনের হঠকারী সিদ্ধান্তে যাত্রীদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি বেড়েছে। একদিকে ট্রিপ কমিয়ে দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে বেঁধে দেয়া হয়েছে সময়। এতে রাজস্ব কমতে কমতে ২২ লক্ষ টাকা থেকে ৪ লক্ষে নেমেছে। টিকেট কেটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
সুনামগঞ্জ-সিলেট রুটে দুইটি নন এসি ও দুইটি এসি বাস চলার নির্দেশনা থাকলেও বাস মালিক সমিতির আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে এই রুটে চলছে মাত্র দুটি এসি বাস। টিকেট কেটে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। গাড়ি ছাড়াতে একটু হেরফের হলে বাস আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিজেদের অপারগতা স্বীকার করে সিলেট বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, বাস মালিক সমিতির দাবির প্রেক্ষিতের বেঁধে দেয়া সময় ও গাড়ির সংকটের কারণে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যাত্রীরা। আমরা চাইলেও কঙ্খিত সেবা দিতে পারছি না। নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছি।
তবে সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতি বলছে এসব অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট। এমন কোনো অভিযোগ তারা পাননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্পোরেশন আইন, ২০২০ ২২(১) এর পরিপন্থী এই সিদ্ধান্তের কারণে সরকার প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ টু সিলেট রুটে বিআরটিসি’র বাস সার্ভিস শুরু হওয়ার পর প্রতিমাসে ২২/২৩ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হতো। সেখানে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন কর্তৃক বিআরটিসি’র বাস চলাচলে সময় ও ট্রিপ কমিয়ে দেয়ায় রাজস্ব কমে এখন মাসে আয় হচ্ছে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩ জুন সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু হয়। এর প্রতিবাদে ওই দিনই সুনামগঞ্জ-সিলেট পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে বাস ধর্মঘট ডাকা হয়। বাস মালিক সমিতির দাবির প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ আঞ্চলিক পরিবহন সমিতি (আরটিসি)’র সভায় বিআরটিসি বাসের ট্রিপ কমিয়ে চলাচলে সময় বেঁধে দেন।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল ৮টা, ৯টা, দুপুর ১২টা, ১টা, এবং বিকাল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট রুটে বাস চলাচলের নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করে দেন। সারাদিনে ৬ ট্রিপ দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও একই সময় বাস চলাচল হওয়ায় এক বাস দিয়ে চাইলেও একসাথে দুই ট্রিপ দেয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া সময় নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে যাত্রী নিতে গিয়ে সময়ের একটু হেরফের হলে বাসমালিক সমিতির বাধা বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ সরকারি এই পরিবহন কর্তৃপক্ষের। এই সমস্যার কারণে বর্তমানে একেকটা ট্রিপে যাত্রী সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জনে নেমে এসেছে।
বিআরটিসি সিলেট’র ডিপো ম্যানেজার মো. জুলফিকার আলী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, যেখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি ইচ্ছে মত পরিবহন সেবা দিতে পারছে সেখানে সরকারী এই সেবায় বাধ্যবাধকতা দেওয়ার কোনো যৌক্তকতা নেই। আমরা শুরু থেকে এই আরটিসি’র এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য বলে আসছি। এই সিদ্ধান্তের ফলে আমরা চাইলেও কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছি না। বাস মালিক সমিতির দ্বারা সময়ে সময়ে নানাভাবে হয়রাণীর শিকার হচ্ছি।
সুনামগঞ্জ টু সিলেট রুটে সরকারি এই গণপরিবহন চালু হওয়ার পর যাত্রী সাধারণের ভূয়সী প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। কিন্তু এখন সেবার মান কমে যাওয়া ও যাত্রীদের ভোগান্তির কারণে কেউ আর এই রুটের বিআরটিসি’র বাসে উঠতে চায় না।
সুনামগঞ্জ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র কোষাধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান কুবাদ বলেন, সরকারি রাস্তায় সরকারি গাড়ি চলবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট রুটে বিআরটিসি বাস চলাচলে সময় ও ট্রিপ কমিয়ে দেয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাস ছাড়ার সময়ে একটু হেরফের হলে বাস আটকিয়ে রাখা হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। যাত্রীরা টিকেট কেটে পড়েন বিপদে। এ সমস্যা সমাধানে আমরা অনেক আন্দোলন করেছি কোনো কাজ হয়নি।
বাস আটকে রেখে যাত্রী হয়রানীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট বলে সুনামগঞ্জ জেলা মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদ বলেন, এ ধরণের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। এটা সর্ম্পূণ মিথ্যা বানোয়াট। আরটিসি’র সভায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং গত দুইবছর ধরে এভাবেই চলছে। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিআরটিসি থেকে আমাকে তারা বলেছে। বাস মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।