নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ৭:৪২:০৮ অপরাহ্ন
ইদানীং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করার উপক্রম। দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিদিন একাধিক নারী ও শিশু নির্যাতন ও নিপীড়নের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। গতকালের মিডিয়ায় ধর্ষণের দু’টি ঘটনা ছাড়াও শিশু হত্যা, নারীর আত্মহত্যা, পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক নারী ধর্ষণ, ছেলের বিরুদ্ধে নির্যাতিত বৃদ্ধার সংবাদ সম্মেলন বিশ^নাথে প্রবাসী নারীকে ধর্ষণ, পুলিশের অসহযোগিতা ইত্যাদি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এটা তো মাত্র একদিনের মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ। প্রতিনিয়ত এ ধরণের নিপীড়ন ও নির্যাতন এবং হত্যাকা-ের খবর প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালিত হচ্ছে। গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই পক্ষ ১০ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে। এ উপলক্ষে গত বুধবার সিলেট মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এফআইভিডিবি এবং সিলেট মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে এক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতারোধে সিলেটের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের অংশ গ্রহণে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে এতো কঠোর আইন এবং সভা সমাবেশ, সেমিনার ও বক্তব্য বিবৃতি সত্বেও এ ধরণের জঘন্য অপরাধ হ্রাসের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং এদেশে দিনে দিনে বাড়ছে এ ধরণের অপকর্ম ও অপরাধ। আইন ও শালিস কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৭৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৩৮৭টি শিশু বিভিন্ন ধরণের সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
অতি সম্প্রতি ‘নারী বিদ্বেষী, কুরুচিপূর্ণ অবমাননাকর বক্তব্যের জেরে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। অনেকের মতে, রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদে আসীন কোন ব্যক্তি যদি নারীদের সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মুরাদের মতো ধারণা পোষণ করে এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করতে পারে, তবে সমাজের অন্যান্য নি¤œ রুচির মানুষেরা তো নারীদের মানুষ বলেই গণ্য করবে না। ফলে বেড়ে যাবে নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা।
বলা বাহুল্য, এক সময় এদেশে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ বলে একটি বিষয় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিলো। এর প্রবক্তাদের মতে, নারীরা দুর্বল ও ক্ষমতাহীন হওয়ায় সমাজে তাদের ওপর অন্যায় অবিচার নির্যাতন ও সহিংসতা চালানো হচ্ছে। এই প্রেক্ষপটে এদেশে পাশ হয়েছে নারী নির্যাতন বিরোধী কঠোর আইন এবং চাকুরিসহ সমাজের সকল স্তরে দেয়া হয়েছে নারীদের প্রচুর ক্ষমতা ও অধিকার। গত এক দশকে এদেশের প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েক লাখ নারীকে পদাসীন করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এ সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন হ্রাসের চেয়ে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও নিপীড়নরোধে এসব ক্ষমতাপ্রাপ্ত নারী কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীলরা তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এভাবে নারীর ক্ষমতায়ন এখন অপংক্তের ও অজনপ্রিয় একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সচেতন মহলের মতে, মানুষের নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের ভিত মজবুত করা না গেলে সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতন হ্রাস পাবে না। এর পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতন ও সহিংসতা বিরোধী আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা না হলে এ সংক্রান্ত কোন আইন, মিছিল-মিটিং সেমিনার কিংবা মানববন্ধন কোন কাজেই আসবে না। আর তা করতে হবে এদেশের পুরুষ ও নারী উভয় নেতৃত্ব মিলিত ও সমন্বিতভাবে। সমাজে নারী যদি নারীর ওপর নির্যাতন চালায় কিংবা নারীর বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তবে কোনভাবেই সমাজ থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন দূর করা যাবে না। ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার কথা বললে অনেকের গায়ে জ¦ালা ধরতে দেখা যায়। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা যে একটি কার্যকর রক্ষাকবচ, এতে কোন সন্দেহ নেই। বিশে^র অনেক উন্নত দেশে কঠোর আইন ও এর প্রয়োগ সত্বেও ধর্ষণসহ নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ কমছে না। এর কারণ ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা এবং এগুলোর অনুশীলনের অভাব। আমরা এদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা এবং এগুলোর অনুশীলনের ও প্রতি সবাইকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানাচ্ছি।